দীর্ঘ দুই মাসের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পর অবশেষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মিশেল বার্নিয়েকে নিয়োগ দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক ব্রেক্সিট মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত এই অভিজ্ঞ রক্ষণশীল রাজনীতিক জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ফ্রান্সে গত আগাম সংসদ নির্বাচনে কোনো দল প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। ২০২৫ সালের বাজেট পাস করার তাগিদে সরকার গঠনের উদ্যোগ এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বার্নিয়ের নেতৃত্বে এ উদ্যোগ নতুন আশার সঞ্চার করছে।
ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) দলের নেত্রী মারিন ল্য পেন আপাতত বার্নিয়ের মনোনয়নকে সমর্থন করেছেন, যা সংসদে ভোটাভুটির সময় বার্নিয়েকে কিছুটা সহায়তা করতে পারে। তবে ল্য পেন অভিবাসন ও নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো নিয়ে মতবিরোধ থাকলে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকিও দিয়েছেন। অন্যদিকে, আরএন দলের একটি অংশ দ্রুত নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে, যা আগামী বছর জুলাইয়ে সরকার ভেঙে দেওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পারে।
৭৩ বছর বয়সী মিশেল বার্নিয়ে ফ্রান্সের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তার পূর্বসূরী গার্বিয়েল আটাল ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী। বার্নিয়ের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দীর্ঘ ২৭ বছর বয়সে সংসদ সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় এবং জাতীয় ও ইউরোপীয় স্তরে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
বার্নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ফ্রান্সের শহর, শহরতলী এবং গ্রামীণ অঞ্চলে থাকা নাগরিকদের অসন্তোষ ও কষ্টকে গুরুত্ব দেবেন। সব রাজনৈতিক শিবিরের মতামত শুনে নীতি নির্ধারণ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে ফ্রান্সের বামপন্থি শিবির, বিশেষ করে চরম বামপন্থি নেতা জঁ-লুক মেলাশোঁ, বার্নিয়ের বিরোধিতা করছেন। মেলাশোঁ অভিযোগ করেছেন যে, ফরাসি জনগণের নির্বাচনী ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং তিনি শনিবার রাজপথে বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ, যেমন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন, এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি, বার্নিয়েকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং তার সাফল্য কামনা করেছেন। এখন বার্নিয়েকে সংসদে সমর্থন প্রমাণ করতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করতে হবে।