নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত গাজী টায়ারস কারখানায় ঢুকে উদ্ধার অভিযান চালানো ‘খুবই বিপজ্জনক’ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহসান৷
বৃহস্পতিবার সকালে কারখানাটি ভবনটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি৷
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের অনুরোধে সকাল ৯টায় বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ থেকে তারা ভবনটি পরিদর্শনে আসেন বলে জানান অধ্যাপক আহসান৷
ভেতরে ঢুকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালানো যাবে কিনা সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে ভবনটির চারপাশ ঘুরে দেখেন এবং ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রকৌশলী৷
তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘ভবনের চারপাশ ঘুরে এবং ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারের (মই) সাহায্যে যতটা সম্ভবন দেখেছি৷ ড্রোনের সাহায্যে ধারণ করা ভিডিও, ছবি পর্যবেক্ষণ করেছি৷ আগুনটা আসলে অনেক সময় ধরে, প্রায় তিনদিনের মতো জ্বলেছে৷ বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল থাকায় তাপও অনেক বেশি হয়েছে৷ ভবনটির অবস্থা দেখলে এটা বোঝা যায়৷ ভবনটি শুধু পুড়ে যায়নি, পুড়ে ভেঙে গেছে৷ রডগুলো বেরিয়ে গেছে৷’
ছয়তলা ভবনটির ভবনটির চতুর্থ ও পঞ্চম তলার মেঝে ধসে তৃতীয় তলার মেঝেতে পড়ে গেছে৷ ভাঙা অংশগুলোর ওজনে তৃতীয় তলাও বেঁকে গেছে বলে জানান এই অধ্যাপক৷
‘কলামগুলো বেশিরভাগ ফেটে গেছে৷ এ ফাটলটা আমরা বাইরে থেকে যতটা দেখতে পাই, আগুন লাগার ফলে ভেতরটাতেও ততটাই ফাটল থাকে৷ উপরের দিকে আগুন বেশি জ্বলায় সেখানে ক্ষতি বেশি হয়েছে৷ এখন নিচের দিকে উদ্ধার অভিযান চালানোর চেষ্টা করা হলে উপর থেকে ভেঙে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে’, যোগ করেন রাকিব হাসান৷
তিনি বলেন, ‘সবকিছু বিবেচনায় এনে ভেতরে ঢুকে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোটা খুবই বিপজ্জনক৷’
পূর্বাভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে এ প্রকৌশলী বলেন, ‘ব়্যাংগস ভবন যখন ভাঙে তখনো আমরা বুয়েটের টিম গিয়েছিলাম৷ সেখানে যে অবস্থা ছিল, তার থেকে বিপজ্জনক অবস্থা এখানে৷ পরবর্তীতে যখন ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে সেটিও অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক করতে হবে৷ যাতে ভাঙার সময়ও কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে৷’
গত রোববার দিনভর লুচপাটের পর রাত ৯টার দিকে টায়ার প্রস্তুতকারী কারখানা ভবনটিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা৷ এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করছেন তাদের স্বজনরা৷ তবে, ঘটনার চারদিন পরও উদ্ধার অভিযান শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস৷
সকালে বুয়েটের দলের পরিদর্শনের পর বেলা ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিটি ফ্লোরের রড বের হয়ে গেছে, কলাম ফুলে গেছে, বিম বাঁকা হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ভবনের ভেতর প্রবেশ করে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ চালানোর সুযোগ নেই৷ তবে আজকে ভবনটির বেইজমেন্টে আমাদের রেসকিউ টিম পাঠাব। সেখানে কোনো লোক আটকা পড়েছে কিনা সেটা আমরা দেখব।’