দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি) পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ যেহেতু আওয়ামী লীগ–সমর্থিত, সভাপতি নাজমুল হাসানসহ ২৫ পরিচালকের বেশির ভাগ আত্মগোপনে। নাজমুল হাসান তো দেশই ত্যাগ করেছেন। নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সক্রিয় দুই–তিনজন পরিচালকের সাহায্য নিয়ে বোর্ডের কাজ চালাচ্ছেন মূলত পেশাজীবী কর্মকর্তারা।
এ অবস্থায় অন্যান্য ক্রীড়া ফেডারেশনের মতো বিসিবিও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা হয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। দায়িত্ব নিয়ে তিনি এরই মধ্যে আশার কথা শুনিয়েছেন। গত কিছুদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অক্টোবরে বাংলাদেশে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলেও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশের বাইরে যাবে না। তিনি মনে করেন, দেশ গঠনের সময়ে এ রকম কিছু ঘটলে, সেটা দেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হবে।
একইভাবে দেশের ক্রিকেট সংকটে পড়তে পারে যদি আইসিসির নিয়মের বাইরে গিয়ে ক্রিকেট বোর্ড পুনর্গঠনে হস্তক্ষেপ করে সরকার। অতীতে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিশ্চয়ই সে পরিণতি চাইবে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে তাদের মতামত ও বর্তমান পরিস্থিতি আইসিসিকে জানিয়েই বিসিবিকে যা করার করতে হবে।
ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, জরুরি পরিস্থিতিতে আইসিসিকে বাস্তব অবস্থা জানিয়ে একটা সমাধান চাইতে পারে বিসিবি। আর সেই বাস্তব অবস্থা হলো, বেশির ভাগ পরিচালকের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বশূন্য সময় পার করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আইসিসির কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে আপৎকালীন বাংলাদেশের ক্রিকেট চালানোর জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি হতে পারে, যারা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। জানা গেছে, এসব বিষয়ে কথা বলতে আজ ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী।
তাঁরা যদি ক্রিকেটের সত্যিকার অর্থেই সেবক হতেন, তাহলে কিন্তু আসতেন। আমার মনে হয় না তাঁরা ক্রিকেটের সেবক ছিলেন। তাঁদের নিজস্ব এজেন্ডা ছিল। সে এজেন্ডাই তাঁরা বাস্তবায়ন করেছেন
নাজমূল আবেদীন, ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক
গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ক্রিকেটারদের অনুশীলন দেখতে এসে এ নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমূল আবেদীন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘যাঁরা সিস্টেম ভালোভাবে চালাতে পারবেন, তাঁরাই ক্রিকেট বোর্ডে আসার যোগ্যতা রাখেন।’ সঙ্গে জানিয়ে রেখেছেন, ‘আমি যদি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু করি, আমি চাইব বিস্তীর্ণ রূপরেখা নিয়ে আসতে। যেন যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের সাহায্য করতে পারি।’
সরকার পতনের পর আড়ালে চলে যাওয়া বোর্ড পরিচালকদের সমালোচনা করে নাজমূল আবেদীনের মন্তব্য, ‘তাঁরা যদি ক্রিকেটের সত্যিকার অর্থেই সেবক হতেন, তাহলে কিন্তু আসতেন। আমার মনে হয় না তাঁরা ক্রিকেটের সেবক ছিলেন। তাঁদের নিজস্ব এজেন্ডা ছিল। সে এজেন্ডাই তাঁরা বাস্তবায়ন করেছেন।’ ক্রিকেট বোর্ডের নেতৃত্বের সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন তিনি, ‘দায়টা সবচেয়ে বেশি নেতৃত্বের। নেতৃত্ব ঠিক থাকলে বাকি জিনিসগুলো এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়।’
বিকেএসপির সাবেক কোচ নাজমূল আবেদীন বিসিবির হাইপারফরম্যান্স বিভাগ, ক্রিকেট একাডেমি, বয়সভিত্তিক দল এবং সর্বশেষ বিসিবির নারী বিভাগে কাজ করেছেন। বিসিবির গত নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।