প্রভাবশালীদের লেনদেনে জোর তদারকির নির্দেশ

প্রভাবশালী হওয়ার কারণে এত দিন যাদের আর্থিক লেনদেন তদারকি করা সম্ভব হয়নি, এবার তাদের লেনদেন কঠোরভাবে তদারকির নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রভাবশালীদের লেনদেন সন্দেহজনক মনে হলেই তাৎক্ষণিকভাবে তা জানানোর নির্দেশনা জারি করেছে ইউনিটটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিএফআইইউ এমন নির্দেশনা দিল।

জানা গেছে, বৈঠকে ব্যাংকগুলোর প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাদের অর্থ লেনদেন কার্যক্রমে তদারকি জোরদার করতে বলা হয়। বিশেষ করে প্রভাবশালী, রাজনীতিবিদ ও ব্যাংকের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লেনদেনের ওপর বাড়তি তদারকির নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নগদ অর্থ লেনদেন–সংক্রান্ত প্রতিবেদন এখন থেকে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে জমা দিতে বলা হয়েছে, যা এত দিন পরের মাসের ২১ দিন পর জমা নেওয়া হতো। প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক নগদ অর্থ লেনদেনের কোনো তথ্য থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে বিএফআইইউকে অবহিত করতে বলা হয়। যেসব ব্যাংক অনলাইনে প্রতিবেদন জমা দিতে সমস্যায় পড়ছে, তাদের তা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সভায় ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানতে চান, প্রভাবের কারণে এত দিন যাঁদের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি, এখন তাঁদের নিয়ে প্রতিবেদন দিলে এই কারণে তাঁরা (ব্যাংকাররা) বিচারের সম্মুখীন হবেন কি না। এর জবাবে বিএফআইইউর কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকারদের বিচারের সম্মুখীন হওয়া নিয়ে কোনো ভয় নেই। আগে প্রভাবশালীদের বিষয়ে প্রতিবেদন দিলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ, যাঁদের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হতো, তাঁরা তাতে আগ্রহী ছিলেন না।

বিএফআইইউ এমন সময়ে এই সভা করেছে, যখন আগের দিনই ইউনিটটির প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, অর্থ পাচার প্রতিরোধের মূল দায়িত্ব এ ইউনিটের হলেও তিনি কোনো ভূমিকা রাখেননি। এর ফলে ডলার–সংকট দেখা দেয় এবং পুরো দেশ আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। অর্থ পাচার প্রতিরোধ না করে উল্টো তিনি পাচারকারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ফলে পুরো ইউনিটের কার্যক্রম ভেঙে পড়ে।

এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর সারা দেশে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব ব্যাংক খাতেও পড়েছে। দখল হওয়া ব্যাংকের মালিকানা পুনরুদ্ধার, অর্থ পাচারে সহায়তাকারীদের অপসারণ ও অবৈধ নিয়োগ বাতিল এবং চাকরিতে পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিভিন্ন ব্যাংকে বিক্ষোভ চলছে। এ ছাড়া বেনামি ঋণের বড় অঙ্কের অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজবগুলো যাচাই-বাছাই করে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে গতকালের সভায়। গুজবের কারণে ব্যাংক খাতে গ্রাহকের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে।

সরকার পরিবর্তনের পর বেনামি ঋণের মাধ্যমে অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা ঠেকানোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। গত মঙ্গলবার এক দিনেই ব্যাংকটি ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলন ঠেকিয়েছে। এসব অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল গ্লোডেন স্টার ও টপ টেন ট্রেডিং হাউস নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। কর্মকর্তারা জানান, দুটি প্রতিষ্ঠানই ব্যাংকের মালিকপক্ষের সঙ্গে যুক্ত।

Scroll to Top