গ্রহণযোগ্যদের নিয়ে সরকার গঠনের আহ্বান ছাত্র জোটের

গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। আন্দোলনকারী শক্তিগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সমর্থনে এ সরকার গঠনের দাবি তাদের।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ছায়েদুল হক নিশানের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর সভাপতি রাগীব নাঈম।

রাগীব নাঈম তার বক্তব্যে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত হয়েছে। এ লড়াইয়ে অসংখ্য ছাত্র-জনতা শহীদী আত্মদান করেছে। আমরা শহীদদের আত্মদানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমরা শহীদদের রক্তের নামে শপথ পড়ছি, শোষণবৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করব।

তিনি বলেন, জনগণের এ সংগ্রামী বিজয়কে আমরা কোনোভাবেই নস্যাৎ হতে দিতে পারি না। সাম্রাজ্যবাদ- আধিপত্যবাদের মদদপুষ্ট কোনো ব্যক্তি বা শক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা হিসেবে আমরা চাই না। আমরা চাই, আন্দোলনে যুক্ত শক্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের সমন্বয়ে একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন গণতান্ত্রিক সরকার’ গঠন করতে হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তারাই থাকবেন যারা এই আন্দোলননের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

এ সময় কয়েকটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো- আন্দোলনকারীদের নামে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার করা, আটককৃত সব ছাত্র-জনতার মুক্তি দেওয়া; সব হত্যা-নির্যাতনের তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করা। ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশদাতা এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত সরকারের মন্ত্রী, পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবির কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগ- যুবলীগের সন্ত্রাসীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। সব হত্যার মূল নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে’ মৃত্যুর প্রকৃত হিসাব বের করা। গুম-খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা; অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা। সিনেট-সিন্ডিকেটকে কার্যকর করা। উপাচার্য নিয়োগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।

বাকি দাবি হলো- ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো রকম একাডেমিক এবং প্রশাসনিক হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা; দেশব্যাপী যেসব ছাত্র-জনতা শহীদ এবং আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। শহীদ আবু সাইদসহ সব শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ উপাচার্য-প্রক্টরসহ দায়ী ব্যক্তিদের অপসারন নিশ্চিত করা; গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দমনপীড়ন নির্যাতন যেন না চলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। নিপীড়নমূলক সব আইন বাতিল করা। সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করা; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদসহ সব অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল করা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত করা ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা এবং বিপ্লবী ছাত্র- যুব আন্দোলনের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) তাওফিকা প্রিয়া।

Scroll to Top