কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে টানা সহিংসতা শেষে বিরতির পর আবার বিক্ষোভের চেষ্টা করেছে শিক্ষার্থীরা। ডিবি হেফাজত থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণার পর রবিবার রাতেই বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ। ঘোষিত সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবেই গতকাল ঢাকার বিভিন্ন স্পটে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ করতে নামেন তারা।
তবে আগে থেকে কঠোর অবস্থানে থাকা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় কোথাও দাঁড়াতে পারেনি তারা। ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর, ইসিবি চত্বর, পল্টনসহ কয়েকটি এলাকা থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকার বাইরে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে বিক্ষোভ হয়েছে। চট্টগ্রামের বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ডিবি কার্যালয়ে ৬ সমন্বয়ক : গত রবিবার রাতে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে কিছু সময়ের মধ্যে তা প্রত্যাখ্যান করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। লিখিত বিবৃতি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের ইসিবি চত্বর, সায়েন্স ল্যাব, পল্টন, ধানমন্ডি স্টার কাবাব, নিউমার্কেট, বাড্ডার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, মিরপুর ১০ নম্বর এবং সেগুনবাগিচায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় ওই সব এলাকার কিছু সড়ক বন্ধ করে যানচলাচলের জন্য ডাইভারশন করে দেয় পুলিশ। ঢাকায় যেসব এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল, সকাল থেকে সেসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র?্যাব, বিজিবি এবং কোথাও কোথাও সেনা টহলও দেখা গেছে। পাশাপাশি র?্যাবের হেলিকপ্টারের টহলও দেখা গেছে।
বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে : পুলিশ দাবি করেছে, তারা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছিল। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি সাব্বির বলেন, সকাল থেকেই মিরপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন ছিল। এ সময় সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মিরপুরের ইসিবি চত্বরে শিক্ষার্থীদের ৫০-৬০ জনের একটি দল জড়ো হয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করে। তবে পুলিশ ছিল সেখানে ২ শতাধিক। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীরা গলিতে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনেও বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেছে আন্দোলনকারীরা। তবে বিক্ষোভ শুরুর আগেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় ধানমন্ডি-১, ২-সহ বিভিন্ন সড়কে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার মো. রেফাতুল ইসলাম বলেন, ধানমন্ডি এলাকা থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। সায়েন্স ল্যাবে শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে দুপুরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। মেরুল বাড্ডায় গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে সহিংসতার পর আবারও কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সে পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাক বিশ্বদ্যিালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। তবে সেখানে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে শিক্ষার্থীরা সমবেত হতে পারেননি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সামনে ও আশপাশের এলাকা থেকে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসিন গাজী বলেন, এই তিনজনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাড্ডা ছাড়াও পল্টন মোড় ও শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ চারজনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।