ছোট বাচ্চাদের তেল মালিশ করার রেওয়াজ বহু যুগ ধরেই চলে আসছে। গোসলের আগে শিশুদের রোদে শুইয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত যত্ন নিয়ে তেল মালিশ করেন মা-দাদিরা। আগেকার দিনে অবশ্য শিশুকে খাঁটি সরিষার তেল দিয়েই মালিশ করা হতো। তবে ইদানীং অনেক বাড়িতেই মা ও দাদিদের মধ্যে এই তেল মালিশ নিয়ে দ্বন্দ্ব চোখে পড়ে।
দাদিদের মতে, সরিষার তেলই নাকি সেরার সেরা, আর নতুন মায়েরা বলছেন অলিভ অয়েল দিয়েই নাকি মালিশ করা ভালো। তবে এই বিষয়ে চিকিৎসকদের কী মত, নবজাতককে সরিষার তেল মালিশ করা কি আদৌ উচিত?
চিকিৎসকদের মতে, সদ্যোজাতদের তেল মালিশের জন্য সরিষার তেল ব্যবহার না করাই ভালো। সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করলে অনেক সময় তেল নাকে ঢুকে যায়। সরিষার তেলের ঝাঁজে শিশুদের কষ্ট ও অস্বস্তি হতে পারে।
তা ছাড়া এখন নির্ভেজাল সরিষার তেল প্রমাণ করার জন্য তেল প্রস্তুতকারী কম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের ঝাঁঝালো উপাদান ব্যবহার করে। সেই উপাদানগুলোর জন্য শিশুর ত্বকে জ্বালাপোড়া করে। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার তেলে অ্যালিল আইসো থায়োসায়ানাইট যৌগ থাকে। এই যৌগটি শিশুর ত্বকের জন্য মোটেও ভালো নয়।
সরিষার তেলের বিকল্প কী
চিকিৎসকদের মতে, সরিষার তেলের পরিবর্তে শিশুর তেল মালিশের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারে নারকেল তেল। অনেকেই শিশুর মালিশ করার জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন। তবে অলিভ অয়েলে থাকা অ্যালোয়িক এসিডও কোনো কোনো শিশুর শরীরে অ্যালার্জি কিংবা র্যাশের কারণ হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে শিশুর জন্মের পরের দিন থেকেই তার তেল মালিশ ও স্পঞ্জিং শুরু করে দেওয়া যায়। গোসলের আগে তেল মালিশ করে পরে ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে।
সদ্যোজাতদের সরিষার তেল মালিশ না করাই ভালো।
কেন তেল মালিশ জরুরি
১. শুষ্ক ত্বকের সমস্যা দূর হয়।
২. ক্ষুধা বাড়ে।
৩. অতিরিক্ত কান্না করার প্রবণতা কমে।
৪. সার্বিক বৃদ্ধি ভালো হয়।
৫. বাবা কিংবা মা তেল মালিশ করলে তাদের স্পর্শ অনুভব করে শিশু। শিশুর বৃদ্ধির জন্য এই ‘টাচ থেরাপি’র গুরুত্ব অনেক।
৬. রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।
৭. ছোট থেকে শিশুর শরীরে তেল মালিশ করলে ভবিষ্যতে তাদের একজিমার মতো রোগের ঝুঁকি কমে।
তেল মালিশের সময় যেসব বিষয় মাথায় রাখা জরুরি
শিশুর ত্বকে নিয়ম করে তেল মালিশ করার গুরুত্ব অনেক। তবে শিশুর ত্বকে কোনো অ্যালার্জি কিংবা সংক্রমণ হলে তেল মালিশ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুকে মালিশ করতে হবে আলতো হাতে। অনেকে মালিশ করার সময় হাড় ফেলেন। ছোটদের হাড় খুব নরম হয়। তাই সাবধান। খুব ধীরে ধীরে তাদের মালিশ করতে হবে।