নাশকতার নেপথ্যে জামায়াত-বিএনপির শীর্ষ নেতারা

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার ষড়যন্ত্র ছিল অনেক গভীরে। হামলাকারীদের মূল টার্গেটে ছিল ধানমন্ডি সুধা সদন, ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তাদের হামলার তালিকায় ছিল। যদিও গত শুক্রবার সেতু ভবন, বিটিভি ভবন, বিকালে নরসিংদী জেলা কারাগার লুটের সফলতার পরবর্তী টার্গেটের জন্য মধ্যরাতকে বেছে নিয়েছিল নাশকতাকারীরা। তবে পরিস্থিতি অনুমান করে সরকারের কারফিউ ঘোষণাতেই ভেস্তে যায় তাদের সব পরিকল্পনা। কোটা সংস্কার আন্দোলন পুঁজি করে রাজধানীসহ দেশব্যাপী সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় গ্রেপ্তারদের জবানিতে উঠে এসেছে এমন সব পিলে চমকানো তথ্য।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার নেপথ্যের মধ্যে জামায়াত-বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অর্ধশতাধিক নেতার নাম পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকার উত্খাতের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে তারা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলার পরিকল্পনা করেন। তাঁদের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তদন্তের এ পর্যায়ে জানতে পেরেছে, এসব হামলা, নাশকতা ও সহিংসতার নেপথ্যে ছিলেন জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। বিএনপি নেতারা আড়ালে থেকে তাঁদের সহযোগিতা করেছেন। এ ব্যাপারে জামায়াত-বিএনপির অর্ধশতাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার নামের তালিকা করা হয়েছে।

ডিবি সূত্র বলছে, তালিকাভুক্ত এসব নেতার মধ্যে গ্রেপ্তার জামায়াত-বিএনপির উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য সামিউল হক ফারুকী। এ ছাড়া গ্রেপ্তার না হওয়া জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের ৬৪ জন আমিরসহ কয়েক হাজার শিবিরের শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারে তালিকা করা হয়েছে।

গত কয়েক দিনের অভিযানে নাশকতায় অংশ নেওয়া ছয় শতাধিক বিভিন্ন পর্যায়ের সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীও রয়েছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পেরেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতেই সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকে অন্তত ৯ হাজার জামায়াত-শিবিরকর্মী ঢাকায় ঢোকেন।

একাধিক সূত্র বলছেন, দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করার জন্য খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর চাউর করে দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন-এ গুজবও সুকৌশলে প্রচার করে দেওয়া হয়। কারাগারে হামলা করা হলে ভিতর থেকে কারাবন্দি জঙ্গি, রাজনৈতিক বন্দি এবং ভয়ংকর আসামিরাও তাতে অংশ নেবে এমন ধারণা ছিল ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাকারীদের। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে তাঁদের এসব পরিকল্পনা সফল হয়নি।

ঢাকায় নিরাপত্তার কোনো হুমকি আছে কি না-জানতে চাইলে ডিএমপির এ যুগ্মকমিশনার বলেন, দু-তিন দিন ধরে সন্ত্রাসীরা গা-ঢাকা দিয়ে আছে। আমাদের ব্লক রেইড চলমান। ব্লক রেইড ছাড়াও ঢাকায় দিনে-রাতে পুলিশের অপারেশন চলমান। সন্ত্রাসীরা গা-ঢাকা দিক আর যেখানেই থাকুক, পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে যে প্রান্তেই পালিয়ে যাক না কেন আমরা তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করব। পুলিশের পোশাকের ওপর আঘাত করা মানে আইজিপির ওপর আঘাত করা, কমিশনারের (ডিএমপির) ওপর আঘাত করা। যারা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করেছে, তাদের এ কালো হাত আইনগতভাবে ভেঙে দেওয়া হবে।

Scroll to Top