৭ পৃষ্ঠার চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিলেন সুমাইয়া

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সাত পৃষ্ঠার চিরকুট লিখে জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়া (১৯) নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার (১৩ জুলাই) রাতে উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বিশগিরীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

রোববার (১৪ জুলাই) সকালে গৃহবধূ সুমাইয়ার মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ

নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়া উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের আবুবকর সিদ্দিকের মেয়ে।

নিহত সুমাইয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে শেরপুর সদর উপজেলার সাপমারী এলাকার ভাতশালা ইউনিয়নের সাপমারী গ্রামের হযরত আলীর ছেলে শিপন আহাম্মেদের (২৩) সঙ্গে পরিবারের অমতে সুমাইয়ার বিয়ে হয়।

এর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় ঘটে। সে সময় শিপন নিজেকে সেনাবাহিনীতে কর্মরত পরিচয় দিয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে সুমাইয়ার বিশ্বাস যোগাতে নিজের সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত ছবি পাঠিয়ে প্রতারণা করেন। তবে শিপন রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে দিনমজুরের কাজ করেন। তারপরও পরিবারের অমতে বিয়ে করেন সুমাইয়া।

স্বজনরা জানান, বিয়ের পর একটি এনজিও থেকে সুমাইয়ার নামে প্রায় তিন লাখ টাকা ঋণ তোলার পর ওই টাকা শিপন ও তার ভাইয়েরা ভাগাভাগি করে নেন। পরে ওই ঋণের টাকা সুমাইয়ার পরিবারকে পরিশোধ করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলো শিপন। এসব বিষয় নিয়ে রাগারাগি করে গত রোজার ঈদের সময় সুমাইয়া তার বাবার বাড়িতে চলে আসে। এরপর থেকে তিনি সেখানেই থাকছিলেন।

এ ঘটনায় শনিবার রাতে সুমাইয়া মনের ক্ষোভে ৭ পৃষ্ঠার চিরকুট লিখে শয়নকক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।

সাত পৃষ্ঠার চিরকুটে মৃত্যুর আগে সুমাইয়া লিখেছেন, ‘বিয়ের গোসলটাও পেলাম না। শেষ গোসলটাও পাব না। জানাজাও পাব না। আমার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিপন। কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে দিলা না।’

তিনি আরও লিখেন, ‘আমি চাইলে দ্বিতীয় বিয়ে করে জীবনটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই না দ্বিতীয় কেউ আমার শরীরটা উপভোগ করুক।’

বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে চিরকুটে সুমাইয়া লিখেন, ‘তোমরা মনে কষ্ট নিও না। শিপনকে সুখে রাখার জন্য আমি চলে যাচ্ছি। আমার মুখ তাকে দেখতে দিও না। আমার শরীরটা কাটতে দিও না। আমি তাহলে কষ্ট পাব।’

আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূঁইয়া জানান, নিহত সুমাইয়ার মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Scroll to Top