টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব আয়ে ধস নেমেছে। স্থানীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪০৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এই আয় এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬৪০ কোটি ৬২ লাখ টাকার চেয়ে ২৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা কম।
কাস্টমস কর্মকর্তা ও আমদানি-রপ্তানিকারকেরা বলেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি (এএ) নামের একটি গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়াই রাজস্ব আদায় কমার প্রধান কারণ। টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রহমানসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পণ্যবাহী বা কার্গো ট্রলার ও জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। এতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। তবে থেমে থেমে পণ্য আমদানি হলেও তা পরিমাণে অল্প। ফলে বিপাকে পড়েছেন এই বন্দরকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানিকারকেরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) সুবিধা দেয় সোনালী ও এবি ব্যাংক। কিন্তু তারা গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চাহিদা অনুযায়ী তা দিতে পারছে না। এ নিয়ে সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মঈনুল হাসান ও এবি ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মনজুরুল আলম চৌধুরী জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো ব্যাংক ড্রাফট দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কয়েক মাস ধরে এফডিডির সুবিধা দিতে চাইলেও মিয়ানমারে যুদ্ধের কারণে ব্যবসায়ীরা এফডিডির সুবিধা নিচ্ছেন না।
টেকনাফ স্থলবন্দরে শুল্ক কর্মকর্তা বি এম আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ব্যবসায়ীরা যেমন চাহিদা অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি করতে পারছেন না, তেমনি ওই দেশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাতের কারণে পণ্যবোঝাই কার্গো ট্রলার ও জাহাজ টেকনাফে আসতে পারছে না। এ জন্য রাজস্ব আদায় কমেছে।
কাস্টমস বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এরপর আগস্টে ৪৮ কোটি ৭৭ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৪৮ কোটি ৭ লাখ, অক্টোবরে ৬৬ কোটি ৬ লাখ, নভেম্বরে ৪৮ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার, ডিসেম্বরে ৫ কোটি ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। পরবর্তী মাসগুলোর আদায় এ রকম: জানুয়ারিতে ৩৭ কোটি ২০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪৩ কোটি, মার্চে ১৮ কোটি, এপ্রিলে ১৭ কোটি ৩২ লাখ, মে মাসে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ও সর্বশেষ জুনে ১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
কাস্টমস সূত্র জানায়, আলোচ্য অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে মোট ৭৫৬ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১ হাজার ৫৪৫ কোটি ৮১ লাখ টাকার পণ্য। সেই হিসাবে এক বছরে পণ্য আমদানি ৭৮৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কমেছে।
অন্যদিকে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রপ্তানি হয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার পণ্য। আগের অর্থবছরে ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আনসার মোহাম্মদ কাউসার বলেন, কয়েক মাস আগেও এই বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন ৩০-৩৫টি পণ্যবাহী কার্গো ট্রলার ও জাহাজ বাংলাদেশে আসত। সেই সংখ্যা কমে এখন সপ্তাহে ১-২টিতে নেমে গেছে। আর বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আগে দৈনিক ৮-১০টি কার্গো ট্রলার মিয়ানমারে যেত। পাঁচ মাস ধরে কোনো ট্রলার পণ্য নিয়ে মিয়ানমারে যাচ্ছে না।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কাঠ, হিমায়িত মাছ, শুকনা সুপারি, আদা, শুঁটকি, নারকেল, আচার প্রভৃতি পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হয়ে থাকে। আর বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে আলু, প্লাস্টিক পণ্য, তৈরি পোশাক, বিস্কুট, চানাচুর, চিপস ও কোমল পানীয় রপ্তানি হয়। আগে ওষুধ, সিমেন্ট, টিউবওয়েল রপ্তানি হলেও এখন তা কমে গেছে।