তিস্তার পর এবার মমতার টার্গেট বাংলাদেশের আলু-পেঁয়াজ

তিস্তার পানির পর এবার বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত আলু পেঁয়াজের ওপরেও খড়গহস্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশে আলু ও পেঁয়াজ রপ্তানি রুখতে প্রয়োজনে বর্ডার চেকিং করার নির্দেশ মমতার। সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পেঁয়াজ চলে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আর তার ফলে রাজ্যে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এমনটাই অভিমত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়কে নিশানা করে মমতার বক্তব্য, রাজ্যের চাহিদা মিটিয়ে তারপরে কেন্দ্রের উচিত পেঁয়াজ রপ্তানি করা।

কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে আলু-পেঁয়াজসহ সব কৃষিপণ্যের দাম মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে আকাশ ছুঁয়েছে। আম আদমির হেঁসেলের আগুনের উত্তাপ ছুঁয়েছে নবান্নকেও। এমন অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে কৃষি পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) নবান্নের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থেকে মমতা কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে বলেন, এটা সত্যি যে দেশজুড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু দামবৃদ্ধির বিষয়টি রাজ্যের এখতিয়ারে নেই, এটা কেন্দ্রের বিষয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

এরপরই মমতা সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার পেঁয়াজ চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমি তো যেতে বারণ করিনি। আগে আমার চাহিদা মিটবে, তারপরে তো আপনি (কেন্দ্রীয় সরকার) দেবেন। তারা নাসিক থেকে নিক, আমার কোন অসুবিধা নেই। আমার পেঁয়াজ এখানে বিক্রি না করে মুনাফালোভীরা নিয়ে যাচ্ছে অন্য দেশে।’ মমতার প্রশ্ন, এটা দেখার দায়িত্ব কি আমার? এটা কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের দেখার কথা।

বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী, সচিব, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাজার কমিটি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন আলুর দাম কেন বাড়ছে? কারা নিচ্ছে? দাম বাড়ার কারণ কী? এই আলুটা রাজ্যের বাইরে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে না তো? এবার থেকে বর্ডার চেকিং হবে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ও মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মমতা জানতে চান, নাসিক থেকে আপনারা কেন পেঁয়াজ কেনেন? আমি নাসিক থেকে কেন পেঁয়াজ আনব? আমি তো এ রাজ্যে গুদামঘর বানিয়ে দিয়েছি। নাসিক থেকে আনতে গিয়ে আমার কি পরিবহন খরচ বাড়ছে না? ডিসেম্বরে আমরা ডিমের উৎপাদনে আত্মনির্ভর হয়ে যাব। কেউ কোনদিন এ কথা ভাবেনি যে আমাকে মাছ আনতে হবে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে, ডিম আনতে হবে হায়দ্রাবাদ থেকে, পেয়াঁজ আনতে হবে নাসিক থেকে। কেন, বাংলা কী তৈরি করতে পারে না?

রাজ্যে পেঁয়াজের দাম কমাতে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ এগ্রি মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট বিষয়টা যত্ন সহকারে দেখুক। নাসিকের পেঁয়াজের উপরে ভরসা না করে আপনারা আমাদের নিজস্ব সুখসাগর ভ্যারাইটি পেঁয়াজ যেটা আমরা উৎপাদন করছি। আমরা কেন চাষীদের কাছ থেকে ওই পেঁয়াজ আরও বেশি করে কিনছি না। তাহলে চাষিরাও দামটা পায়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মমতার স্পষ্ট বার্তা যে তাদের নাসিক থেকে পেঁয়াজ আনার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

Scroll to Top