janaja

যৌনকর্মীদের জানাজার নামাজ পড়া কি নাজায়েজ?

বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যতীত নারি-পুরুষের যৌনমিলনকে ব্যভিচার বলে। ইসলামে এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। সবচেয়ে বড় গুনাহগুলোর মধ্যেও একটি।

আল্লাহ তাআলা এটি করতে নিষেধ তো করেছেনই এর ধারে কাছে যেতেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَۃً وَسَآءَ سَبِیۡلًا
আর ব্যভিচারের কাছেও যেও না, তা হচ্ছে অশ্লীল কাজ আর অতি জঘন্য পথ। (সুরা ইসরা ৩২)

কেউ যদি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ব্যভিচার করে এবং ব্যভিচার করাটাকে পেশা বানিয়ে নেয়, তাহলে তা যে অত্যন্ত ভয়াবহ পাপ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মুসলমানদের মধ্যে যারা অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায় কোরআনে তাদের কঠোর শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা নুর ১৯)

তাই ব্যভিচার যেমন করা যাবে না তেমনই এর প্রচার ঘটুক এমন কাজ করা যাবে না। যে ব্যভিচার করে তাকে সমর্থন দেয়া হয় এমন কাজ করা যাবে না।

কেউ ব্যভিচার করলে তার মর্যাদা নষ্ট হয়। এজন্য একজন ব্যভিচারী কোনো সৎ নারীকে বিয়ে করতে পারে না বলে আয়াত নাজিল করেছেন আল্লাহ তাআলা। কারণ এতে বিয়ের কুফু মিলে না। মুসলমানের সাথে যেমন মুসলমানের বিয়ে হওয়া উচিত তেমনই মুসলমানের সাথে মুশরিকের বিয়ে হওয়া অনুচিত।

এই মুশরিকের সাথে একজন মুসলমানের বিয়ে না হওয়াটা ঈমান ও মর্যাদার দিক থেকে বিপরীত। তাই তাদের পরস্পর বিয়ে করা অনুচিত। অনুরূপ ব্যভিচারের কারণে একজন মুসলমানের মর্যাদা নষ্ট হয় তাই তার সাথে মুসলমানের বিয়ে অনুচিত। ঠিক বিষয়টি আল্লাহ তাআলা কোরআনে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন,

একজন ব্যভিচারী পুরুষ আরেকজন ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক মেয়েকেই বিয়ে করবে এবং একজন ব্যভিচারিণী মেয়েকে আরেকজন ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিকই বিবাহ করবে। মুমিনদের জন্য তা করা হারাম। (সুরা নুর ৩)

কিন্তু কোনো মুসলমান যদি ইসলাম ত্যাগ না করে, তাহলে ব্যভিচারসহ অন্যান্য বড় পাপে লিপ্ত হলেও সে কাফের হয়ে যায় না। পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নেয়া মহাপাপ হলেও এ কারণে যৌনকর্মীরা কাফের হয়ে যায় না। তাই কোনো মুসলমান দুর্ভাগ্যক্রমে এ রকম পেশা গ্রহণ করলেও মৃত্যুর পর তার জানাজা পড়তে হবে এবং মুসলমানদের মতো দাফন করতে হবে।

অন্যান্য মুসলমানদের মতো মুসলমান যৌনকর্মীদের জানাজার নামাজ পড়াও ফরজে কেফায়া বা মুসলমান সমাজের আবশ্যকীয় কর্তব্য। অর্থাৎ কয়েকজন জানাজা পড়লে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, কেউ না পড়লে সবাই গুনাহগার হবে।

সাধারণ জনগণের মাধ্যমে যৌনকর্মীর জানাজা আদায়ের ব্যবস্থা হলে, নামাজ পড়ানোর উপযুক্ত ব্যক্তি থাকলে সমাজের অনুসরণীয় বড় আলেম ও নেতৃস্থানীয়দের উচিত তার জানাজায় অংশগ্রহণ না করা। যেন অন্যরা বুঝতে পারে এটি একটি গর্হিত ও বড় পাপ; এটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মহত্যাকারীর জানাজা আদায় করতে অন্যকে বললেও নিজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেননি। (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসাঈ ২১০২)

কিন্তু যদি পরিস্থিতি এ রকম হয় যে, এলাকার মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ছাড়া জানাজা পড়ানোর উপযুক্ত কেউ নেই, তারা জানাজা না পড়ালে কেউ জানাজা পড়াবে না বা পড়বে না, তাহলে তাদের কর্তব্য তাদের জানাজা পড়িয়ে দেয়া।

Scroll to Top