ভোট দেওয়া তো দূরের কথা, ভোটকেন্দ্রের ধারেকাছেও যেতে চাই না, গেলে হয়তো সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ আমাদেরকে হিজাব না পরার জন্য জবাবদিহিতা শুরু করবে। বুঝতে পারছি না, কারা ভোট দিচ্ছে! এই ভোটে কিছুই পরিবর্তন হবে না। সব আগের মতোই থাকবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের বিশোর্ধ্ব দুই তরুণী আল-জাজিরার প্রতিবেদকের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন। এই দুই তরুণীর মতো অনেকেই শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়া দেশটির নির্বাচনে ভোট দেননি, বলছে দ্য গার্ডিয়ান।
দেশটিতে ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ১০ লাখেরও বেশি হলেও সবাই ভোট দেবেন না। কারণ অনেকেই ইরানের বর্তমান ব্যবস্থা নিয়ে সস্তুষ্ট না। তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ নেতা বা দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিলের হাতের পুতুল। তার ইশারায় কিছুই নড়ে না। সব ক্ষমতার উৎস সবোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এখন চলছে গণনা। ম্যানুয়ালি ব্যালট গণনার পর আগামী দুই দিনের মধ্যেই ফল ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও প্রাথমিক ফলাফল আগেই পাওয়া যেতে পারে।
চার প্রার্থীর মধ্যে যে ব্যক্তি অর্ধেকের বেশি ভোট পাবেন তিনিই হবেন দেশটির প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির উত্তরসূরি। যদি কোনো প্রার্থী মোট ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান তবে নির্বাচন রান-অফে গড়াবে অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সেই নির্বাচন হবে ফল ঘোষণার পরের শুক্রবার।
প্রেসিডেন্ট বনাম গার্ডিয়ান কাউন্সিল
কে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যে প্রার্থী হবেন আর কে হতে পারবেন না তা নির্ধারণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের সদস্য ১২ জন। তারা সবাই সর্বোচ্চ নেতা খামেনির ঘনিষ্ঠ। এবারের নির্বাচনেও প্রায় ৮০ জন প্রার্থী নির্বাচনের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ৬ জনকে নির্বাচনে লড়ার অনুমতি দিয়েছে এই কাউন্সিল। এবার ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদের আহমেদিনেজাদের নিবন্ধনও খারিজ করে দিয়েছে এই কাউন্সিল।
সর্বোচ্চ নেতা খামেনি
১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি দেশটির প্রধান ও কমান্ডার ইন চিফ। দেশটির সরকারি পুলিশ ও নীতি পুলিশের কর্তৃত্ব খামেনির হাতে।
ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) নিয়ন্ত্রণও আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির হাতে। আইআরজিসির দায়িত্ব ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা করা।
আইনপ্রণয়নেও গার্ডিয়ান কাউন্সিল
ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা যাচাই করা হয় পার্লামেন্টের মাধ্যমে। পার্লামেন্ট নতুন বিল পাস করে। তবে এই বিল আইনে পরিণত করতে দরকার হয় গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদন। ভেটোও দিতে পারে তারা। অনুমোদন না দিলে কোনো বিল আইনে পরিণত হবে না।
ইরানের প্রেসিডেন্ট দেশটির শীর্ষ নির্বাচিত কর্মকর্তা। সর্বোচ্চ নেতার পরই তার অবস্থান। সরকারের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব তার ওপর। ইরানের অভ্যন্তরীণ নীতি ও পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। তবে তার ক্ষমতাও বিশেষ করে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে সীমিত।
প্রেসিডেন্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানের সরকারি পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করে। তবে পুলিশের কমান্ডার নিয়োগ দেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। আর কমান্ডারকে সরাসরি সর্বোচ্চ নেতার কাছে জবাবদিহি করতে হয়।