বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল বন্ধ থাকায় নদ-নদীর পানি কমছে। বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি ফিরে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখন প্রায় খালি।সিলেট নগর এলাকায় এখন মাত্র দুটি ওয়ার্ডের কিছু এলাকা আর ১৩ উপজেলার ১০৭টি গ্রাম এখনো কমবেশি বন্যাকবলিত। সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো ছয় হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়ে গেছে।
মৌলভীবাজারে চার দিনে বন্যার পানিতে ডুবে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা সবাই শিশু-কিশোর। হবিগঞ্জে বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা ও কালনী কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়েছে। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সিলেট : জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নগর এলাকায় দুটি ওয়ার্ডে এখন বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩০০ জনে নেমে এসেছে। তবে ১৩ উপজেলার সাত লাখ ৮৯ হাজার ১৩১ জন মানুষ এখনো পানিবন্দি। গতকাল আরো ২৪৯ জন বাড়ি যাওয়ায় এখন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৯০৫ জন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ১৪ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদে বিপত্সীমার ২১ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপত্সীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার নিচে নেমে গেছে।
বাকি নদ-নদীর পানিও কমতির দিকে।
সুনামগঞ্জ : এখনো ছয় হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়ে গেছে, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় তারা ফিরতে পারছে না। তবে বন্যার্ত মানুষদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ছাতক পয়েন্টে এখনো ৯ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
দেখার হাওর ভরাট করে গড়ে ওঠা সম্প্রসারিত শহরের বাসাবাড়ি থেকে পানি নামলেও রাস্তাঘাটে পানি রয়ে গেছে। হাসননগর, ওয়েজখালী, কালিপুর, পূর্ব নতুনপাড়া, দক্ষিণ হাজিপাড়া এলাকার অন্তত হাজারো পরিবার এখনো জলাবদ্ধতায়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, জেলায় প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছিল। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি চলে গেছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।
মৌলভীবাজার : গত চার দিনে বন্যার পানিতে ডুবে সাত শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলো সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের পচন মিয়ার ছেলে ছাদি মিয়া (৮), একই গ্রামের জমির মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (১৭), পাহাড় বর্ষিজোড়া গ্রামের লিমন শেখ (১২) ও খলিলপুর ইউনিয়নের আজিজুল ইসলাম (৬), কনকপুর ইউনিয়নের বুদ্ধিমন্তপুর গ্রামের শিবলু মিয়ার ছেলে সোহান আহমদ (৭), বড়লেখা উপজেলার ভাগাডহর গ্রামের আয়শা বেগম (১২) ও কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের মুক্তাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাছির মিয়ার ছেলে আবু সাইদ আহমদ রেদোয়ান (৬)।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, নিহত সাতজনের পরিবার প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। শিশুদের প্রতি খেয়াল রাখার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, চারটি নদীর মধ্যে তিন নদীর বিপত্সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর শুধু জুড়ী নদী বিপত্সীমার ১৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা যায়, দু-এক দিনের মধ্যে পানি কমে যাবে।
হবিগঞ্জ : জেলার বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় দুটি নদীর পানি বাড়ছে। বন্যায় এক হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাহুবল উপজেলার করাঙ্গী নদীর পানি ভাদেশ্বর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামে প্রবেশ করায় বাসিন্দারা দুর্ভোগে আছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
জেলা প্রশাসক জিলুফা সুলতানা জানান, ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও এখন চালু আছে আটটি।