ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জারি করা জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল সোমবার অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশন শুরুর আগে গণমাধ্যমের সামনে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ২৫ জুন জরুরি অবস্থা জারির ৫০তম বার্ষিকী। এটি ভারতের গণতন্ত্রের ওপর এক কালো দাগ।
এবারের সাধারণ নির্বাচনে ২৯২টি আসনে জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। তবে গত দুইবারের মতো এককভাবে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ বিজেপি এবার পেয়েছে ২৪০টি আসন। তাই অধিবেশনের আগে দেওয়া ভাষণে ‘সহমতের ভিত্তিতে’ কাজ করার কথা বলেছেন মোদি। এতে জোট শরিকদের প্রতি তাঁর নির্ভরতার বিষয়টিই আবার ফুটে উঠেছে বলে মত বিশ্লেষকদের। অন্যদিকে নতুন করে চাঙ্গা হওয়া কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩৩টি আসন।
গত দুইবারের চেয়ে এবার অনেক ভালো অবস্থানে আছে বিরোধীরা। তাই গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও মণিপুরে সংঘাতের মতো ইস্যুতে মোদির সরকারকে কোণঠাসা করতে ইন্ডিয়া জোটের তৎপরতার কমতি থাকবে না বলেই ইঙ্গিত মিলছে। এরই মধ্যে অস্থায়ী (প্রটেম) স্পিকার পদে আটবারের এমপি কংগ্রেসের কে সুরেশের বদলে ওড়িশা থেকে নির্বাচিত বিজেপির এমপি ভরত্রুহরি মেহতাবকে নিয়োগ দেওয়ায় মোদি সরকারের সমালোচনা শুরু করেছে বিরোধীরা। তবে অধিবেশন শুরুর আগে দেওয়া ভাষণে নরেন্দ্র মোদি যে সুরে কথা বলেছেন, তাতে মনে হচ্ছে বিরোধীদের কোনো ছাড় দিতে ইচ্ছুক নয় তাঁর দল।
গতকাল সকাল ১১টার দিকে নতুন সংসদ ভবনে শুরু হয় অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশন। নবনির্মিত এই ভবনে প্রথমবারের মতো শপথবাক্য পাঠ করেন এমপিরা। শপথবাক্য পাঠ করান অস্থায়ী স্পিকার ভরত্রুহরি মেহতাব। তিনি মোদিকে লোকসভার নেতা ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ওয়েনাড়ের এমপি পদ থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।
রাহুল তাঁর উত্তর ভারতের আসনটি ধরে রাখবেন।
এর আগে দেওয়া ভাষণে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা জারির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, আগামীকাল (আজ) ভারতীয় গণতন্ত্রের কালো অধ্যায়ের ৫০ বছর পূর্ণ হবে। ভারতীয় সংবিধানকে কিভাবে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল, দেশকে কিভাবে কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল এবং গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল, তা নতুন প্রজন্ম কখনোই ভুলবে না। এই ৫০তম বার্ষিকীতে দেশবাসীকে শপথ নিতে হবে, এমনটা আর কখনোই হবে না।
বিরোধীদের কঠোর বার্তা দিয়ে মোদি বলেন, ভারতের একটি দায়িত্বশীল বিরোধী দল প্রয়োজন। জনগণ কাজ চায়, স্লোগান নয়। তারা সংসদে নাটক ও গোলযোগ নয়, বিতর্ক চায়। আশা করছি, বিরোধী দল জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
মোদির কটাক্ষের জবাবে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, দেশবাসীর আশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁস, পশ্চিমবঙ্গে ট্রেন দুর্ঘটনা অথবা মণিপুরের সহিংসতা নিয়ে কথা বলবেন।
খাড়গে বলেন, ‘আপনি (মোদি) বিরোধীদের সতর্ক করছেন। আপনি ৫০ বছর পুরনো জরুরি অবস্থার কথা বলছেন, কিন্তু গত ১০ বছরের অঘোষিত জরুরি অবস্থার কথা ভুলে গেছেন। জনগণ মোদির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। ইন্ডিয়া জোট সংসদ ও সংসদের বাইরে জনগণের আওয়াজ তুলে ধরবে।’