সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে পূজার প্রসাদ খেয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে ৩৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বানিয়ারজাঙ্গাল বাসন্তী মন্দিরে।
কালিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ স্থানীয়দের বরাতে সাংবাদিকদের জানান, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বানিয়ারজাঙ্গাল বাসন্তী মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা পূজা শেষে প্রসাদের খিচুড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় ডায়রিয়া ও বমি। এই অবস্থায় অসুস্থ ভক্তদের সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
অসুস্থদের মধ্যে উত্তম দত্তের ছেলে কাব্য দত্ত (৫) রাত ১টার দিকে খুলনা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে প্রচন্ড গরমের মধ্যে প্রসাদের খিচুড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কাব্য দত্তের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভক্তদের বরাতে সাংবাদিকদের জানান, বানিয়ারজাঙ্গাল বাসন্তী মন্দিরের ভক্তরা শনিবার থেকে প্রচন্ড গরমের মধ্যে পূজা চালিয়ে আসছিল। রোববার দিন থেকে সবার মধ্যে অসুস্থতা লক্ষ্য করা যায়। যার ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়লে যে যার মতো করে চিকিৎসা নেয়া শুরু করে। তবে অসুস্থদের মধ্যে উত্তম দত্তের ছেলে কাব্য দত্ত (৫) রাত ১টার দিকে খুলনা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায়। প্রথমে তাকে কালিগঞ্জ উপজেলা ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।
তিনি বলেন, শিশু কাব্য মূলত খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের বাসিন্দা। নানা অশোক দত্তের বাড়ি বেড়াতে এসে বাবা মায়ের সঙ্গে মন্দিরে অংশ নিয়ে প্রসাদের খিচুড়ি খায়। কালিগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে ৩৭ জন। এ ছাড়াও উপজেলার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ২৫ থেকে ৩০ জন চিকিৎসা নিচ্ছে।
তবে গুরুতর অসুস্থরা হলেন, বিষ্ণুপুর গ্রামের অশোক দত্তের মেয়ে ও কাব্য দত্তের মা তিথি দত্ত (২৫), নিমাই সেনের ছেলে দীপু সেন (৪২), চন্ডিচরণ দত্তের ছেলে সুব্রত দত্ত (৪২) ও অসীম দত্ত (৩২)।
মন্দির কমিটির সদস্য নিমাই সেন জানান, কীর্তন শেষে চার বালতিতে করে প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছিল। প্রসাদ খেয়ে কারো কারো পাতলা পায়খানা হয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহিন বলেন, কাব্যর মৃত্যু ও অসুস্থতার কারণ তদন্ত ছাড়া বলা কঠিন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বাসন্তী মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা পূজা শেষে প্রসাদের খিচুড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বুলবুল কবির জানান, বানিয়াজাংগাল মন্দিরের আশপাশে টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু পানির কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। রান্নার অনেক ঘণ্টা পরে বিতরণ করা হয়েছিল বিধায় খিচুড়িতে প্রচুর পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে পাতলা পায়খানা বা বমি হতে পারে। ফুড পয়েজনিংও হতে পারে।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওই ঘটনায় ৩৭ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।