ঈদের মাসে ২৩ দিনে প্রবাস থেকে ২০৫ কোটি লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে শুধু ২৩ জুনই এসেছে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
হঠাৎ রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ের গতি বেড়ে যাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে ব্যাংক খাতে। কেউ কেউ বলছেন, অনেকেই আগে পাচার করে নেওয়া অর্থ এখন প্রবাসী আয়ের নামে দেশে ফিরিয়ে আনছেন। আর প্রবাসী আয়ের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উচ্চ দর পাওয়া যাচ্ছে। দেশে ডলার–সংকটের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বাড়াতে বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রবাসী আয়ে, এমন ধারণা অনেক ব্যাংকারের।
জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে ১৪৬ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। আর ২৩ জুন পর্যন্ত তাঁরা পাঠান ২০৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের ১ থেকে ২১ জুন প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা সাধারণত ঈদের সময় দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের কাছে বছরের অন্য মাসের তুলনায় বেশি প্রবাসী আয় পাঠিয়ে থাকেন। এবারের কোরবানির ঈদ উপলক্ষেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
জানতে চাইলে একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। আবার অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ আনার সুযোগও রাখা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনেককে টাকা ফেরত আনার জন্য বলা হয়েছে। এ জন্য অনেকে পাচারের টাকা ফেরত আনছেন, যা তাঁদের বৈধ সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে ২২৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে, যা ৪৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তার মানে, গত মাসে গড়ে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসে ৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আর চলতি মাসের প্রথম ২৩ দিনে গড়ে প্রতিদিন এসেছে ৮ কোটি ৯২ লাখ ডলার। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে দিনে গড়ে প্রায় ১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বেশি প্রবাসী আয় এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক একলাফে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করার পর বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। যার প্রভাব দেখা গেছে গত মাসে। চলতি মাসেও এখন পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা চলছে। তবে নথিপত্রে ডলারের দাম ১১৭ টাকা হলেও ব্যাংকগুলো ১১৮-১১৯ টাকা দরেও প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে। যে ব্যাংক ডলারের দাম যত বেশি দিচ্ছে, সেটি প্রবাসীদের কাছ থেকে তত বেশি ডলার পাচ্ছে। এসব ব্যাংক অবশ্য বেশি দামে অন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এতে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকও এসব ব্যাংক থেকে ডলার কিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ায়।
এ মাসের প্রথম ২৩ দিনে যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে, তার মধ্যে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের একটি হলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম বলেন, জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। এ জন্য প্রবাসী আয় বাড়ছে। কোরবানির সময় এমনিতে বাড়ে। মানুষের দেশপ্রেমও হয়তো বাড়ছে। সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় বাড়ছে।
২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের কারণে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গিয়েছিল। তখন প্রবাসী আয় প্রতি মাসে গড়ে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। এর প্রভাবে তখন বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ডলার–সংকট শুরু হয়। ফলে মোট রিজার্ভ কমতে কমতে এখন ২৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তবে প্রকৃত রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলার।
দেশে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার।