বরগুনার আমতলীতে সেতু ভেঙে নিহত সাতজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার সকালে জানাজা শেষে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন হয়। এর আগে গতকাল শনিবার রাত তিনটার দিকে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা।
নিহত সাতজন হলেন মাদারীপুরের শিবচরের ভদ্রাসন গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী শাহানাজ আক্তার মুন্নী (৪০), তাঁর দুই মেয়ে তাহিদা (৭) ও তাসদিয়া (১১), একই এলাকার মৃত ফকরুল আহম্মেদের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), সোহেল খানের স্ত্রী রাইতি আক্তার (৩০), বাবুল মাদবরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪০) ও রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রুমি বেগম (৪০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার আমতলীতে বোনের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত বুধবার ঢাকা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভদ্রাসনে গ্রামের বাড়িতে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। তবে প্রাণ হারান তাঁর স্ত্রী শাহানাজ আক্তার মুন্নী, দুই মেয়ে তাহিদা ও তাসদিয়া। এই দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় ব্যাংক কর্মকর্তার বোন, ভাবি, দুই ভাগনেসহ একই পরিবারের ৭ জনকে।
নিহত ফাতেমা বেগমের স্বামী বাবুল মাদবর আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার সব শ্যাষ হয়ে গেল। বিয়ের আনন্দ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছে, এই দুঃখ কোথায় রাখি। আমি কীভাবে এই দৃশ্য ভুলব! আল্লাহ তুমি আমাকেও ওদের সঙ্গে নিয়া যাও। ওদের ছাড়া আমিও আর বাঁচতে চাই না।’
নিহত ফরিদা বেগমের ছেলে মাহাবুব খান বলেন, ‘আমার মা এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না। আমার মাকে তোমরা ফিরাইয়া দাও। যার মা নাই, তার এ দুনিয়াতে আপন বলে কেউ নাই।’
মাদারীপুরের শিবচরের ভদ্রাসন ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রহিম ব্যাপারী বলেন, ‘এক পরিবারের সাতজন একসঙ্গে মারা যাওয়ায় পুরো ইউনিয়নে শোকাহত সবাই। নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। কীভাবে এই শোক মেনে নেবে, সেটাই বুঝতে পারছি না। তবুও এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ সব সময় পরিবারটি পাশে থাকবে, সেই প্রত্যাশা করছি।’
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুরে আমতলীর কাউনিয়ার মনিরুল ইসলামের মেয়ে হুমায়রার সঙ্গে একই এলাকার সেলিম ইসলামের ছেলে সোহাগের বিয়ে হয়। কনেপক্ষ বৌভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বরগুনার আমতলী এলাকার হলদিয়া খালের ওপর লোহার ব্রিজ ভেঙে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস পানিতে পড়ে যায়। এতে নারী–শিশুসহ ৯জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, বৌভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে একসঙ্গে এক পরিবারের সাতজনের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক।