মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণের রহস্য জানতে যৌথভাবে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে চীন ও ফ্রান্স। গত শনিবার চীনের জিচ্যাংয়ে অবস্থিত মহাকাশ ঘাঁটি থেকে ‘লং মার্চ ২-সি’ নামের রকেটের মাধ্যমে ‘স্পেস ভ্যারিয়েবল অবজেক্ট মনিটর’ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। চীন ও ফ্রান্সের বিজ্ঞানীদের তৈরি স্যাটেলাইটটিতে চারটি যন্ত্র আছে। পৃথিবী থেকে ৬২৫ কিলোমিটার ওপরের কক্ষপথে অবস্থান করা ৯৩০ কিলোগ্রাম ওজনের স্যাটেলাইটটির মাধ্যমে মহাবিশ্বে গামা রশ্মি বিস্ফোরণের কেন্দ্রের তথ্য খুঁজে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণত বিশাল নক্ষত্র বিস্ফোরণের পরে গামা রশ্মির বিস্ফোরণ ঘটে। এসব বিস্ফোরণ সূর্যের চেয়ে ২০ গুণের বেশি শক্তিশালী হয়। বিস্ফোরণের কারণে উজ্জ্বল মহাজাগতিক আলো তৈরি হয়, যা শত শত কোটি সূর্যের বিস্ফোরণের সমান। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফ্ল্যাটিরন ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের জ্যোতিঃপদার্থবিদ ওরে গটলিব বলেন, বিস্ফোরণ থেকে আলো আমাদের কাছে পৌঁছাতে অনেক সময় নেয় বলে পুরো বিষয়টিকে সময়ের দিকে ফিরে তাকানোর মতো মনে হয়। বিভিন্ন রশ্মি মহাকাশের মধ্য দিয়ে আসার সময় গ্যাস ও ছায়াপথের চিহ্ন বহন করে। মহাবিশ্বের ইতিহাস ও বিবর্তনকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করবে নতুন স্যাটেলাইটটি।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, নতুন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি রহস্য উন্মোচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী গামা রে বার্স্ট বা জিআরবি বিস্ফোরণ। আজ পর্যন্ত শনাক্ত করা সবচেয়ে দূরবর্তী বিস্ফোরণটি বিগ ব্যাংয়ের ৬৩ কোটি বছর পর হয়েছিল। সেই সময়ে মহাবিশ্ব তার শৈশবকালে অবস্থান করছিল।
ফ্রান্সের প্যারিস ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেডেরিক ডাইগনে বলেন, ‘আমরা নিজেদের স্বার্থে গামা-রশ্মি বিস্ফোরণের রহস্য জানতে আগ্রহী। এসব বিস্ফোরণের তথ্য আমাদেরকে নক্ষত্রের মৃত্যুকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে অসম্ভব সব ঘটনা বিশ্লেষণ করতে পারি আমরা। নতুন কৃত্রিম উপগ্রহটি ফ্রান্স ও চীনের মহাকাশ সংস্থা যৌথভাবে পাঠিয়েছে। পশ্চিমা দেশের সঙ্গে চীনের মহাকাশবিষয়ক সহযোগিতা বেশ অস্বাভাবিক বলা হচ্ছে।’