গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এখনো অব্যাহত রয়েছে জিঞ্জিরাম, ধরনী ও কালজানি নদীর পানি বৃদ্ধি।এ উপজেলার ১৯৮টি গ্রামের মধ্যে ৬৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বন্যায় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ভেলায় করে চলাচল করছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। রান্নাঘর ও শৌচাগার ডুবে যাওয়ায় চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্যার্ত এলাকার নারী-শিশুসহ পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে গবাদিপশু।
খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া চারদিকে পানি থাকায় কর্মহীন পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। যার ফলে পরিবারগুলো অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। ত্রাণের আশায় দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের ফুলুয়ারচর, পশ্চিম ফুলুয়ারচর, পালেরচর ও চরশৌমারী ইউনিয়নের সোনাপুর, ঘুঘুমারী, সুখেরবাতি, উত্তর খেদাইমারী, উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের খেয়ারচর, সাহেবের আলগা, দইখাওয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায় এসব চিত্র।
গত কয়েক দিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে চরাঞ্চল তলিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল পানির নিচে ডুবে গেছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে নদীতে তীব্র ভাঙন। গত এক সপ্তাহে ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছে ৪০টি পরিবার।
ফলুয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ঋণ করে তিল, চিনা, কাউন ও মরিচের টাল করেছিলাম। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি থাকায় জমিতে যেতে পারিনি। আজকে গিয়ে দেখি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখন খাব কী আর ঋণের টাকা কিভাবে শোধ দেব।
রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাওয়াইর গ্রামের ছপিয়াল হক বলেন, ৩ দিন যাবৎ বাঁশের মাচা ও চৌকি উঁচু করে সাপের ভয়ে মশারি টাঙিয়ে কোনোরকম রাতযাপন করছি।
যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, চারদিকে পানি থাকায় কাজকর্ম বন্ধ। গত এক সপ্তাহ থেকে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। কোনো জনপ্রতিনিধি খোঁজখবর নিতে আসেনি।
যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, সরকারিভাবে এখনো কোনো বরাদ্দ পাইনি। আমার এলাকার বন্যা পরিস্থিতি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গতকাল জানিয়েছি। বন্যার পানির অবনতি হওয়ায় আজ আবার তালিকা করা হচ্ছে।
রৌমারী উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, এবারের বন্যা একটু ব্যতিক্রম।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বন্যার্তদের জন্য ৩ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী আসছে। এই ত্রাণসামগ্রী দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হবে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) স্যারকে অবগত করেছি। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সভা করা হবে।