পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আর সময় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে খুরশীদ আলম বলেন, আইন অনুযায়ী বেনজীর ও তাঁর পরিবার দুদক থেকে আর সময় পাবেন না। তাঁর পরিবারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধান শেষে কমিশন মনে করলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
গত ২৮ মে বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো নোটিশে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে। ৫ জুন দুদকের কাছে সময় চান বেনজীর আহমেদ। ৫ জুন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক বরাবর ১৫ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করা হয়।
তবে বেনজীরের পক্ষে কে সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন, সেটা নিশ্চিত করেনি দুদক। এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার জহুরুল হক দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি শুনেছি, দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে বেনজীর ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন। আইন অনুযায়ী তাঁকে সময় দেওয়া হবে।’
জহুরুল হক সাংবাদিকদের আরও বলেন, দুদক কাউকে নোটিশ করলে তিনি আসতে বাধ্য কি না, সেটা আইনে সুস্পষ্ট বলা নেই। না এলে ধরে নিতে হবে যে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই। তবে তাঁর সুযোগ আছে সময় চাওয়ার। সময় চাইলে দুদক ১৫ দিন সময় দিতে পারবে। এই এখতিয়ার কমিশনারের রয়েছে।
বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে ১২ জুন নতুন করে ঢাকায় আটটি ফ্ল্যাট ও জমি জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ছয়টি ফ্ল্যাট ঢাকার আদাবরের একটি ভবনে। দুটি বাড্ডায়। রূপায়ন লিমিটেড স্কয়ার নামের ১৪ তলা ভবনে অবস্থিত বাড্ডার ফ্ল্যাট দুটি বাণিজ্যিক বা অফিস স্পেস।
বেনজীর পরিবারের নামে এ নিয়ে ঢাকায় ১২টি ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেল। এর আগে পাওয়া গিয়েছিল গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন নতুন করে খোঁজ পাওয়া বেনজীর পরিবারের আটটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। পাশাপাশি আদালত বেনজীর পরিবারের প্রায় ৭৬ বিঘা (২৫ একর) জমি জব্দ এবং বেসরকারি সিটিজেন টেলিভিশন ও টাইগার ক্রাফট অ্যাপারেলস লিমিটেডের শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন।
আদালত এর আগে দুই দফায় বেনজীর ও তাঁর পরিবারের নামে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কক্সবাজার ও ঢাকার সাভারে থাকা ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার এবং গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছিলেন। তখন ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ৩টি বিও হিসাবও (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
আদালতের ওই আদেশ আসার আগেই ৪ মে বেনজীর আহমেদ দেশ ছেড়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওই সূত্র জানিয়েছে।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যার মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল।