কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া, ভুঁড়ি, দড়ি, কাপড় সবকিছু নিজে খাওয়া ও ব্যবহার করা যায়। শুধু বিক্রি করা যায় না। বিক্রি করে দিলেই তার মূল্য গরিবদেরকে দান করে দিতে হবে।
কোনো ব্যক্তি যদি কোরবানি দেন। তবে তিনি তার কোরবানি করা পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবেন। কোরবানিকারী ব্যক্তি ইচ্ছা করলে নিজের কোরবানির চামড়া দাবাগত করে তা ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কোরবানির চামড়া সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোরবানির পশুর চামড়া দ্বারা উপকৃত হও; তবে তা বিক্রি করে দিও না।’
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যখন চামড়া দাবাগত করা হয়, তখন পবিত্র হয়ে যায়।’ (মুসলিম) দাবাগত হলো, কোনো কিছু দিয়ে চামড়া এমনভাবে প্রক্রিয়াজাত করা, যাতে তা নরম ও দুর্গন্ধমুক্ত হয়ে যায়।
পশুর চামড়া দিয়ে সাধারণত পোশাক, জুতা, বেল্ট, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। আবার চামড়া থেকে জিলাটিন বের করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ওষুধ ও প্রসাধনীতেও ব্যবহার হয়। তবে, পশুর চামড়ার তৈরি খাবারেরও প্রচলন রয়েছে বিভিন্ন দেশে। যেমন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ার মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশেও বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোনো কোনো এলাকায় পশুর চামড়ার তৈরি খাবারের প্রচলন রয়েছে। কোরবানির পশুর চামড়া খাওয়া কি হালাল না হারাম? জবেহকৃত হালাল পশুর প্রবাহিত রক্ত ছাড়া সবই হালাল (সুরা আনআম ১৪৫)
হালাল পশুর ভুঁড়ি বা বট খাওয়া যেমন হালাল, একইভাবে চামড়া খাওয়াও হালাল। সুতরাং কেউ যদি প্রক্রিয়াজাত করে হালাল পশুর চামড়া খেতে চায়, খেতে পারবে। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হলে বিরত থাকতে হবে। কেননা রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং ক্ষতি করো না। (ইবনে মাজাহ ২৩৪০)
ইসলামে হালাল পশুর যে ৭টি অংশ খাওয়া নাজায়েজ, এর মধ্যে চামড়া নেই। তাই চামড়া খাওয়াকে হারাম বলার সুযোগ নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল পশুর নিষিদ্ধ অংশগুলো হলো- ১. প্রবাহিত রক্ত, ২. অণ্ডকোষ, ৩. গোশত বা চামড়ার মধ্যে সৃষ্ট জমাট মাংসগ্রন্থি, ৪. মূত্রথলি, ৫. পিত্ত, ৬ ও ৭. নর ও মাদির যৌনাঙ্গ। হাদিসে এসেছে,
রসুলুল্লাহ (সা.) বকরির সাতটি জিনিস অপছন্দ করেছেন: পিত্ত, মূত্রথলি, মাংসগ্রন্থি, নর ও মাদির যৌনাঙ্গ, অণ্ডকোষ, (প্রবাহিত) রক্ত।
সুতরাং কোরবানির পশুর চামড়া প্রসেস করে কেউ খেতে চাইলে খেতে পারবেন। অথবা সদকা করে দেবেন। আলি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রসুল (স.) আমাকে তার কোরবানির পশু জবাই করতে, পশুর গোশত, চামড়া ও নাড়িভুঁড়ি সদকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এগুলোর কোনো কিছু কসাইকে দিতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি ১৭১৭, মুসলিম ১৩১৭)