cow22

চামড়ায় নৈরাজ্য রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি

দেশের বেশির ভাগ পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয় রাজধানীর পাশে সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে। এই নগরীতে এবার কোরবানির চামড়া প্রবেশ হবে নিয়ন্ত্রিত। ঈদের দিন থেকে পরবর্তী সাত দিন শুধু ঢাকা জেলায় কোরবানি করা পশুর চামড়া প্রবেশ করবে। সাত দিন পর থেকে চামড়া আসবে অন্যান্য স্থান থেকে।

এই সময়ে পাইকারদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে।
শিল্পনগরীর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন, এই চামড়া নগরীর ওপর বাড়তি চাপ এড়াতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এটি যেন কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) সক্ষমতার বাইরে চলে না যায়।

কোরবানির ঈদ ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে। কেমিক্যাল আর লবণ মজুদসহ কারখানাগুলো প্রস্তুত রেখেছেন অতিরিক্ত শ্রমিকরা। বিসিকের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। গত বছর বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি পিস থাকলেও এবারে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে এক কোটি ১০ লাখ পিস। চামড়ার ভালো দাম পেতে নিয়ম মেনে চামড়া সংরক্ষণের পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, জেলা প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, স্থানীয় ব্যবসায়ী, মাদরাসা, এতিমখানার প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেছে, যাতে স্থানীয়ভাবে লবণ দিয়ে পশুর চামড়া সংরক্ষণ করা হয়।

জাতীয় সম্পদ চামড়ার ব্যবস্থাপনা নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘এবার চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যায় পর্যন্ত এই ব্যবস্থা নিয়েছি। এবার আমাদের লবণ অনেক উৎপন্ন হয়েছে, আমরা অনেক এতিমখানায় লবণ বিনা মূল্যে দিয়েছি। প্রতিবার ঝামেলা হয়, সরকারের নির্ধারিত মূল্যে চামড়ার দাম ব্যবসায়ীরা দিতে চান না।

এবার প্রতি পিস হিসেবে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যদি সঠিকভাবে চামড়ার দাম দেন, তাহলে আশা করি একটি চামড়াও নষ্ট হবে না।’

গত ৩ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে এবার প্রতি পিস গরুর চামড়ার সর্বনিম্ন দাম এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের সবচেয়ে বড় চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করা হয় সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে। এখানে প্রায় ১৪২টি ট্যানারি রয়েছে। এর ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার। কিন্তু কোরবানির সময় তা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ঘনমিটার হয়ে যায়। এই বাড়টি চাপ যাতে সৃষ্টি না হয়, সে জন্য চামড়া সাত দিন থেকে তিন মাস পর্যন্ত জেলায় সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জেলা পর্যায়ের চামড়া ঢাকা পাঠানো বন্ধ করতে প্রশাসনের পক্ষ নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা চামড়া ব্যবসায়ী, সংরক্ষক, লবণের ডিলারদের নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক করেছি। ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। তাঁরা নিজেরা চামড়া সংরক্ষণ করবেন। ব্যবসায়ীরা সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ঢাকার দিকে চামড়া নেবেন না। আমাদের জেলার ১৫০ এতিমখানা ও চামড়া সংগ্রাহকদের বলা হয়েছে। কিছু লবণও আমরা বিনা মূল্যে দিয়েছি। যাতে কিছুদিনের জন্য নিজেরা চামড়া সংরক্ষণ করতে পারে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫টি বড় এতিমখানায় বিনা মূল্যে লবণ দিয়েছি।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সিইটিপির পরিচালনা কমিটির সদস্য শাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, ‘গরু, ছাগল, মহিষ মিলিয়ে আমরা এ বছর এক কোটি থেকে এক কোটি ১০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছি। এ বছর লবণের দামও অনেকটা আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে। যারা যথাযথ নিয়ম মেনে চামড়া সংরক্ষণ করবে, তারা চামড়ার ন্যায্য মূল্য পাবে। এ ছাড়া চামড়া শিল্প নগরীর সিইটিপির অবস্থা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।’

নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, যানবাহনের জট এড়ানোসহ বিসিকের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আমরা বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। তাদের সঙ্গে আলাদা সভা করেছি। জেলা পর্যায়ের চামড়া যেন ঈদের সাত দিনের মধ্যে ঢাকায় না আসতে পারে, এ জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

Scroll to Top