৭৩–এ শাবানা বললেন, পরিবারটাই আমার জগৎ

২৪ বছর ধরে অভিনয়ে নেই তিনি। তাতে কি। চার দশক ধরে এমন সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা মানুষের মনে গেঁথে গেছে। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। তাই তো আজও এ দেশের মানুষের মনে তিনি ঠিকই জ্বলজ্বলে একটি নাম। বাংলা ছবিপ্রেমীরা শাবানার নাম শুনলে আবেগপ্রবণ হন, গর্ব বোধ করেন। ২৪ বছর আগে অভিনয়কে বিদায় জানানো শাবানা এখনো কোটি বাঙালির হৃদয়ে অভিনয়ের রানি হয়ে আছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনয়ের এই রানির আজ জন্মদিন। ১৯৫২ সালে আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসেবে ৭২ বছর পূর্ণ করে ৭৩–এ পদার্পণ হলো শাবানার।

মাত্র আট বছর বয়সে সিনেমায় অভিনয়ে নাম লেখান শাবানা। এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ নামের ছবিতে তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ‘চকোরী’ ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় শুরু। ২৪ বছর ধরে অভিনয় থেকে দূরে সরে আছেন চলচ্চিত্রের গুণী এই অভিনয়শিল্পী। অভিনয়জীবনে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় হুট করেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। শুরুর দিকে নিউইয়র্কে থাকলেও এখন স্বামী, সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে নিউ জার্সিতে থাকছেন। একটা নির্দিষ্ট সময় পর বাংলাদেশে এলেও চার বছর ধরে আসা হয়নি।

শাবানার সঙ্গে চার বছর আগে দেখা হয় তাঁরা বারিধারার বাসায়। প্রযোজক স্বামী ওয়াহিদ সাদিকসহ পারিবারিক কাজে এসেছিলেন। কিছুদিন থেকে আবার উড়াল দিয়েছিলেন। সাধারণত দেশে এলেও জনসমক্ষে আসতে চান না। কয়েকটি দিন নিজের মতো করে কাটিয়ে আবার দেশের বাইরে পাড়ি জমান। এক আড্ডায় শাবানা বলেছিলেন, ‘দেশের বাইরে হয়তো অনেক চাকচিক্যের মধ্য দিয়ে জীবন পার করা যাবে, কিন্তু শান্তি পাওয়া যায় না। তাই তো সুযোগ পেলেই চলে আসি।’ রাস্তাঘাটের নিরাপত্তাসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে উন্নতি করতে পারলে বাংলাদেশের চেয়ে শান্তির বিশ্ব আর কোথাও আছে কি না, তাঁর জানা নেই।

৭২ বছর বয়সী শাবানা ৮ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে নাম লেখান। টানা চার দশক অভিনয়ের সঙ্গে ছিলেন। ২৪ বছর ধরে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেই বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী জানালেন, ‘এত দূর থেকে মনে করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোয় অনেক খুশি হয়েছি। এই বয়সে আর জন্মদিন। এখন নাতি-নাতনিদের জন্মদিন উদ্‌যাপন করি। নিজের জন্মদিনের কথা তো মনেও থাকে না।’

শাবানা যখন অভিনয় ছেড়ে দেন, তখন ফেসবুক ছিল না। সামাজিক যোগাযোগের অন্য কোনো মাধ্যমও ছিল না। এখন এই বিশেষ দিনে পরিচিত, অপরিচিত সবাই ফেসবুকে নানা কিছু লিখছেন। পুরোনো দিনের অনেক স্থিরচিত্রও পোস্ট করে থাকেন। নাতি-নাতনিরা এসবের খবর শাবানার কাছে পৌঁছে দেয়।

শাবানা বলেন, ‘আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না। তবে ফেসবুকে যে লেখালেখি হয়, এসব আমার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি সবই জানায়। তারা দেখায়ও, কোথায় কী লেখা হয়েছে। কে কী ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেছে, আমি ওসব দেখি। বেশ উপভোগ করি। নস্টালজিক হই। ছেলে-মেয়ে যখন বলে, আম্মু দেখো দেখো তোমাকে নিয়ে কী সব লিখেছে, তখন অনেক ভালো লাগে। আনন্দ লাগে। মনে হয়, মানুষ আমাকে এখনো ভোলেনি, আগের মতোই ভালোবাসে। আগের চেয়ে বেশিও ভালোবাসে। সবার এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসায়—সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই। খুশির স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। আবেগাক্রান্ত হই।’

অভিনয়ের চূড়ান্ত ব্যস্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো শাবানাকে পরে একাধিকবার নতুন চলচ্চিত্রে দেখা যাবে, এমনটা শোনা গিয়েছিল। এর মধ্যে বেগম রোকেয়ার জীবনী নিয়ে তৈরি একটি চলচ্চিত্রের কথা বারবার শোনা গেছে। এখন আর অভিনয়ে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানালেন শাবানা।

বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী বললেন,‘এ বয়সে আর কীভাবে। এখন তো অনেক বয়স হয়ে গেছে। আল্লাহর নাম নিয়ে পার করে দিচ্ছি সময়। মাঝেমধ্যে সুখময় স্মৃতিগুলো মনে করি। ছেলে-মেয়েরা, নাতি-নাতনিরা মাঝেমধ্যে আমার ছবি সম্পর্কে নানা কিছু জিজ্ঞেস করে। আমিও তখন বলি, ওই ছবিটা দেখো। এখন পরিবারটাই আমার জগৎ। এ জগতে আমার অনেক ব্যস্ততা।’

অভিনয়জীবনের সেই সময়ের কথা এখন আর ভাবেন না শাবানা। ভাবতে চানও না। শাবানার মতে, ‘ওসব নিয়ে এখন আর সত্যিই ভাবি না। কারণ, আমি যখন অভিনয় করতাম, মনপ্রাণ দিয়ে তা-ই করতাম। অভিনয়ের সময় আমি সবকিছু ভুলে যেতাম, শুধু অভিনয় নিয়েই থাকতাম। আমি কখনোই আমার কাজে ফাঁকি দিইনি। ভালো-খারাপ যদি কিছু হয়ে থাকে, তা দর্শকেরাই বলবে। একজন অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী, খেলোয়াড়, রন্ধনশিল্পী—সবাই কিন্তু চান তাঁর সেরাটা উপহার দিতে। আমিও তেমনটাই চেয়েছিলাম।’

Scroll to Top