বরিশালের তাপমাত্রা কয়েকদিন ধরেই ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে রয়েছে। কখনো কখনো এই তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে। এই অবস্থায় কুরবানির হাটে পশু বিক্রি করতে এসে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারী ও ব্যাপারীরা।
বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই মাদ্রাসা ময়দানে বসেছে জেলার সর্ববৃহৎ পশুরহাট। এখানে সাতক্ষীরা থেকে ৪৬টি গরু নিয়ে এসেছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, ৬ লাখ টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরু আছে তার কাছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) হাটে আসলেও মূলত শনিবার (১৫ জুন) হাট জমে উঠেছে। তবে গত কয়েকদিনের তীব্র গরমে গরুগুলো সুস্থ রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান এই বিক্রেতা।
মাহাবুব হোসেন নামের এক বেপারী বলেন, প্রতি কুরবানিতে ৩০-৪০টি গরু বিভিন্ন স্থান থেকে এনে হাটে হাটে বিক্রি করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে কোনভাবে একটি গরু মারা গেলে তার সব লাভ শেষ হয়ে যাবে। এ জন্য হাটে গরু উঠানো নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। হাট পরিচালনাকারী বেলাল হোসাইন বলেন, গরু নয়, হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ক্রেতারা এসে যাতে ছায়া এলাকায় বসতে পারেন তারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। থাকছে পশু চিকিৎসকের টিমও। এ কারণে বেপারীদের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
এই গরমে হাটে না এসে অনেকে খামার থেকে গরু কিনছেন। বানারীপাড়া উপজেলার চাখারের বাসিন্দা সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতি বছর তিনি একটি অথবা দুইটি গরু বিক্রি করেন। আগে হাটে নিয়ে গরু বিক্রি করতে হতো। তবে এ বছর বাড়ি থেকেই একটি গরু বিক্রি করেছেন। তীব্র গরমের কারণে কেউ হাটমুখী হতে চাচ্ছেন না বলে দাবি তার।
বাবুগঞ্জ উপজেলা এমইপি এগ্রোর ম্যানেজার অমি জানান, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে খামারীদের শেডের মধ্যে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচবার গরুর গোসল করাতে হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থার পাশাপাশি অসুস্থ হলে দ্রুত পশু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। এভাবে গরুর প্রতি নজর রাখা সব খামারীর বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি গরুর মৃত্যু হলে খামারীর বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তার কথায়, অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে গরুকে সুস্থ রাখতে শেডে পর্যাপ্ত ভেল্টিনেশনের এবং সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে স্যালাইন পানি ও পর্যাপ্ত সাধারণ পানি খাওয়ানো হয়। কোনোভাবে গরু অসুস্থ হলে খাবার খাওয়া কমে যায়, এতে ওজন নেমে আসে। যা ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. নুরুল আলম বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে গরু যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে, সেজন্য খামারীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। বেপারী ও খামারীদের অবহিত করা হয়েছে, গরু সুস্থ রাখতে হলে স্যালাইনযুক্ত পানি পান করাতে। একইসঙ্গে সাধারণ পানির পাশাপাশি খাবারও দিতে হবে। এছাড়া পশু বেশী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে জানানোর অনুরোধও করা হয়েছে।
তিনি জানান, বরিশাল জেলায় মোট পশুর চাহিদা রয়েছে ১১ লাখ ২ হাজার ৯৪৭টি। আর কুরবানির উপযোগী পশু রয়েছে ১১ লাখ ৪ হাজার ৫৫৭টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৯১ হাজার ৮৪৮টি, ছাগল ২২ হাজার ৫৯০টি, ভেড়া ৭৪টি এবং অন্যান্য ৪৫টি।