৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা বন কর্মকর্তা

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ৯ কোটি ৩১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীবরদী থানায় মামলা করেছেন বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা সুমন মিয়া। ঘটনা তদন্তের জন্য শুক্রবার দুদক জামালপুর কার্যালয়ে অভিযোগপত্রটি পাঠিয়েছে থানা পুলিশ।

বন কর্মকর্তার লাপাত্তার ঘটনায় তাঁর বর্তমান অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। একটি পক্ষ বলছে, এ বন কর্মকর্তা দেশ ছেড়েছেন। তবে তাঁর সহকর্মীরা জানান ১৫-২০ দিন আগেও তিনি দেশে ছিলেন। এরপর তাঁর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। বন কর্মকর্তার দুর্নীতির ঘটনায় বালিজুরি রেঞ্জের সামাজিক বনায়নের আড়াই শতাধিক উপকারভোগী উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

জানা গেছে, জামালপুরের মাদারগঞ্জের বাসিন্দা বন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম। ২০১৬ সালে বালিজুরি রেঞ্জে যোগদান করেন তিনি। এরপর তাঁকে বেশ কয়েকটি বিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এলাকাবাসী জানান, গত ৮ বছরে বালিজুরি, কর্ণঝোড়া, ডুমুরতলীসহ বনের আশপাশের কয়েকটি এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন রবিউল ইসলাম। তাঁর দাপটে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। অনিয়মের কথা বললে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে দিতেন তিনি। সুফল বাগান প্রকল্পেও অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর দুর্নীতির ঘটনাটি স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। প্রাথমিক তদন্তে এসে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ ঘটনার সত্যতা পান এবং রবিউলের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন।

কয়েক মাস আগে তাঁকে বদলি করে ফরিদপুর বন বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। পরে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। এই কমিটি গভীর অনুসন্ধান করে রবিউল আলমের অপকর্মের সত্যতা পান। পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক বন কর্মকর্তা জানান, মাসখানেক আগে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে একটি আবেদন রেখে লাপাত্তা হয়ে গেছেন রবিউল ইসলাম।

শ্রীবরদী থানায় মামলার অভিযোগে বলা হয়, বন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বালিজুরি রেঞ্জের কর্ণঝোড়া, ডুমুরতলা বিটের সামাজিক বনায়নের চারশতাধিক গাছ দরপত্রের পর অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কয়েক কোটি টাকা নিজ পকেটে তুলেছেন। রাজস্ব খাতে জমা না দিয়ে ৯ কোটি ৩১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৯৫ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভেগে গেছেন তিনি।

বালিজুরি গ্রামের সামাজিক বনায়নের সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, তারা প্রায় ২৫০ শতাধিক ব্যক্তি ১০ বছর ধরে বনের গাছের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। গাছ বিক্রি হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। এখন টাকা পেতে বন বিভাগে গেলে কবে টাকা পাওয়া যাবে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কর্মকর্তারা।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ৭০-৮০ জন ব্যবসায়ীর যোগসাজশ আছে। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

Scroll to Top