cow

নিজে নাকি হুজুরকে দিয়ে কুরবানির পশু জবাই করানো উত্তম, জেনে নিন

প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন যেকোনো মুসলিম ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। অর্থাৎ, কেউ সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা এর সমপরিমাণ নগদ টাকা কিংবা সম্পদের মালিক হলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তার কুরবানি করা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে- মাহনাফ ইবন সুলায়মান (রা.) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে আরাফায় অবস্থান করছিলাম। তখন তিনি বলেন, হে লোক সকল! আমাদের প্রত্যেক গৃহবাসীর ওপর প্রতি বছর কুরবানি করা ওয়াজিব। (আবু দাউদ, ২৭৭৯)

এ ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো ঈদের নামাজের পর পশু কুরবানি করা। ঈদের নামাজের আগে কুরবানি করলে তা সঠিকভাবে আদায় হবে না। মুতাররাফ বারা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতের পর জবেহ (কুরবানি) করলো তার কুরবানি পূর্ণ হলো এবং সে মুসলিমদের নীতি পালন করলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১৪৭)

অপর হাদিসে এসেছে, বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে খুতবা দেয়ার সময় বলতে শুনেছি, আমাদের আজকের এই দিনে (ঈদের দিনে) সর্বপ্রথম আমরা যে কাজটি করবো তা হলো সালাত (নামাজ) আদায়। এরপর আমরা ফিরে গিয়ে কুরবানি করবো। যে ব্যক্তি এভাবে করবে সে আমাদের সুন্নাতকে অনুসরণ করবে। আর যে ব্যক্তি পূর্বেই জবেহ (কুরবানি) করে তা তার পরিবার পরিজনের জন্য অগ্রিম মাংস (হিসেবে গণ্য), তা কিছুতেই কুরবানি বলে গণ্য নয়। তখন আবূ বুরদা (রা.) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (সা.) আমি সালাত আদায়ের পূর্বেই জবেহ করে ফেলেছি এবং আমার কাছে একটি বকরির বাচ্চা আছে। যেটি পূর্ণ এক বছরের বকরির চাইতে উত্তম। রাসুল (সা.) বললেন, তুমি সেটিকে কুরবানি করো। তোমার পরে এ নিয়ম আর কারও জন্য প্রযোজ্য হবে না। (সহিহ বুখারি, ৫১৬২)

তবে কুরবানি দেয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষকেই হুজুরকে দিয়ে পশু জবাই করাতে দেখা যায়। আবার অনেকে মনে করেন কুরবানির পশু জবাই করার জন্য বিশেষ দোয়া পড়তে হয়। তবে কুরবানির পশু নিজে জবাই করাই উত্তম। এমনকি খোদ রাসুল (সা.)-ও নিজ হাতে কুরবানির পশু জবাই করেছেন। ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে জবেহ করতেন এবং নহর করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১৫৪)

অপর হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া দ্বারা কুরবানি করেছেন। তখন আমি তাকে দেখতে পাই তিনি ভেড়া দুটোর পার্শ্বদেশে পা রেখে ‘বিসমিল্লাহ্‌’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে নিজের হাতে সে দুটোকে জবেহ করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১৬০)

এ ছাড়া আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই শিং ওয়ালা সাদা-কালো বর্ণের দুটি দুম্বা কুরবানি করেন। আমি তাকে দুম্বা দুটি নিজ হাতে জবেহ করতে দেখেছি। আরও দেখেছি, তিনি সে দু’টির কাঁধের পাশে তার পা দিয়ে চেপে রাখেন এবং ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহ আকবর’ বলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯২৮)

উপরিউক্ত হাদিসগুলো দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, কুরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম। এটি সুন্নাহ্। তবে হুজুরকে দিয়ে পশু জবাই করালেও কুরবানি আদায় হয়ে যাবে।

Scroll to Top