লাল টুকটুকে ‘ভুটান’ স্বভাবে বেশ শান্ত। খাওয়াদাওয়াতেও তেমন না নেই। ভুসি, ডাল, দানাদার খাবার, সবুজ ঘাস; সবই চলে তার। তবে অন্য আর দশটা গরুর মতো নয় ভুটান। সে আকারে ছোট, খর্বকায়। ব্যাপারী ২৭ ইঞ্চি উচ্চতার ভুটানের দাম হাঁকছেন তিন লাখ টাকা। একটু এদিক-সেদিক করে ছেড়ে দেবেন।
কিন্তু ভুটান কি আদৌ বিক্রি হবে, এমন প্রশ্নে কুষ্টিয়ার ব্যাপারী ইমদাদুল হক জানালেন, কেউ শখ করে কিনতে চাইলে দামে ছাড় দেবেন। থাকবে উপহারও।
দুই দিন আগে কুষ্টিয়া থেকে ভুটান এসেছে চট্টগ্রাম নগরের বিবিরহাট গরুর বাজারে। এরপর তাকে ঘিরে শিশুদের আগ্রহ থামছেই না। আজ শুক্রবার বিকেলে হাটে গিয়ে দেখা গেল, শিশুরা ভুটানকে এক নজর দেখছে। কেউ গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কেউ ঘাস খাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ভুটান নিজের মতো শুয়ে-বসে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে।
গরুটির নাম ভুটান কেন জানতে চাইলে ব্যাপারী ইমদাদুল হক বলেন, বছর দেড়েক আগে গরুটি ভুটান থেকে কুষ্টিয়াতে আনেন এক ব্যাপারী। এরপর এক বছর আগে ভুটানকে কিনে নেন তিনি। ভুট্টি জাতের গরু এটি। এ কারণে নাম দেওয়া হয়েছে ভুটান। বর্তমানে এটি দেশের সবচেয়ে ছোট গরু বলে দাবি করেন এই ব্যাপারী।
অবশ্য শুধু শিশু নয়, বাজারের প্রাপ্তবয়স্ক ক্রেতা-দর্শনার্থীরাও ভুটানকে নিয়ে মেতে আছেন। কেউ ছবি তুলছেন। কেউ আবার ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনই একজন রুহুল আমিনকে পাওয়া গেল ভুটানের সঙ্গে। তিনি ছবি তুলছিলেন। একফাঁকে ত্রিশোর্ধ্ব রুহুল আমিন বললেন, সাগরিকা ও কর্ণফুলী গরুর বাজার ঘুরে তিনি বিবিরহাট এসেছেন। ৭০ হাজারের মধ্যে গরু খুঁজছেন। তবে ভুটানের কাছে এসে চোখ আটকে গেল।
চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের বাসিন্দা সৈয়দ আমিনুল ইসলামও ভুটানের ছবি তুলছিলেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বেসরকারি চাকরিজীবী আমিনুল জানান, ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বাজেট করেছেন এবারের কোরবানির পশু কেনার জন্য। এ দামে এখনো গরু মেলাতে পারেননি। তাই ঘুরছেন। আর ঘুরতে ঘুরতে ভুটানের দেখা পেলেন। আমিনুলের সঙ্গে ছিল ১০ বছর বয়সী সন্তান সৈয়দ আদিলুর ইসলামও। সে ভুটানের সঙ্গে ছবি তুলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল।
অবশ্য ব্যাপারী ইমদাদুল হক ভুটান ছাড়াও এবার ১৮টি গরু এনেছেন। এর মধ্যে আজ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি হয়েছে। ইমদাদুল হক বলেন, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রামে গরু নিয়ে আসছেন তিনি। শুধু ২০২২ সালে কয়েকটি গরু ফেরত নিয়ে যেতে হয়েছিল। বাকি সময় সব বিক্রি করেই ঘরে ফিরেছেন। এবারও ঈদের আগে বিক্রি হয়ে যাওয়ার আশা করছেন।
ভুট্টি জাতের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ভুট্টি জাতের গরু খর্বকায় আকৃতির হয়। অনেকটা বামন ধরনের। এটি তেমন বাড়ে না। তবে কোরবানির জন্য এ ধরনের গরু বিক্রির তেমন প্রচলন নেই। কেউ শখ করে কিনতে পারেন।
এর আগে ২০২১ সালের দিকে ঢাকার আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় শিকড় অ্যাগ্রো লিমিটেড নামের একটি খামারে এ রকম ভুট্টি জাতের আরেকটি গরু লালন-পালন করা হয়েছিল। গরুটির নাম দেওয়া হয়েছিল রানি। উচ্চতা ছিল মাত্র ২০ ইঞ্চি। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু হিসাবে স্বীকৃতি পেতে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করা হয়েছিল। ২০২১ সালের ২ জুলাই ওই আবেদন করা হয়। কিন্তু দুই বছর বয়সী রানি অসুস্থ হয়ে ওই বছরের ১৯ আগস্ট মারা যায়। আর সেপ্টেম্বরে গিনেস কর্তৃপক্ষ এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর খেতাব দেয়।