সাধারণত স্ট্রোক শব্দ শোনা মাত্রই ব্রেন বা মস্তিষ্কের ধারণা আসে আমাদের। কেউ কেউ আবার হিটস্ট্রোক শব্দের সঙ্গেও পরিচিত। তীব্র গরমে হিটস্ট্রোক হয়ে থাকে। এ থেকে মানুষের মৃত্যুও হয়। তবে গরমের তীব্রতার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে চোখেরও স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চোখের স্ট্রোক সম্পর্কে হয়তো সবার ধারণা নেই। ঘুম ছাড়া অধিকাংশ সময়ই আমাদের চোখ খোলা থাকে। এ কারণে বাতাসে থাকা ধুলাবালি, ময়লা ও অন্যান্য জীবাণু গরমের তীব্রতার আঁচে সরাসরি চোখে গিয়ে লাগে। ফলে প্রদাহ শুরু হয়। এ সময় চোখে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বিঘ্ন হয়ে চোখের প্রেশার বেড়ে যায়। একপর্যায়ে রেটিনা রক্তবর্ণ হয়।
সম্প্রতি দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে চোখের স্ট্রোক সংক্রান্ত ব্যাপারে কথা বলেছেন রাজধানী ঢাকার মিরপুর ২-এর বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালের প্রধান জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট ও চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. মো. সফিউল ইসলাম। এ চিকিৎসক জানিয়েছেন, চোখের রেটিনা রক্তবর্ণ হলে ওই সময় চিকিৎসা করানো উচিত। তা না হলে দুই চোখেরই দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চোখের সঙ্গে সরাসরি মস্তিষ্কের সংযোগ রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন যদি রক্তচাপ বা শর্করা অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাহলে চোখে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ থেকেও স্ট্রোক হতে পারে চোখের।
চোখে স্ট্রোকের লক্ষণ: চোখ লাল হয়ে ফুলে গিয়ে অবিরত পানি পড়তে পারে। রেটিনার ওপর রক্তজালিকা ভেসে উঠে। কখনো কখনো রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনাও ঘটে। চোখে রক্ত সরবরাহ বিঘ্ন হয়ে অনেক সময় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। কেউ কেউ আবার সাদা দেয়ালের দিকে তাকানোর পরও তাতে ধূসর ধূলিকণা ঘুরে বেড়াতে দেখতে পান। যা সাধারণত ‘ফ্লোটার্স’ নামে পরিচিত।
দৃষ্টি ঝাপসা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় চোখের নির্দিষ্ট কোনো অংশ ঝাপসা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কারও ক্ষেত্রে আবার পুরো দৃষ্টিশক্তিই ঝাপসা হয়ে যায়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি যদি জটিল হয় তাহলে দৃষ্টিশক্তিও চলে যেতে পারে। অধিকাংশ সময়ই চোখ স্ট্রোক হলে সেটি অনুধাবন বা বুঝতে পারেন না রোগী। আবার চোখে অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি হয়। আর এ অবস্থায় কিছুটা সচেতন হলে এসব অস্বস্তি অনুভব করা যায়।
চোখ স্ট্রোক থেকে প্রতিরোধের উপায়: উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে নিয়মিত ব্যায়াম করে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি পূরণে নিয়মিত এসব উপাদানসমৃদ্ধ খাবার, বাদাম ও বীজ খেতে হবে। এ তালিকায় কিশমিশ ও শুকনা ডুমুর রাখতে পারলে ভালো। গাজর, পালংশাক, ব্রুকলি, মিষ্টি আলু ও স্ট্রবেরিসহ অন্যান্য বিটা-ক্যারোটিনযুক্ত খাবার রাখতে পারেন ডায়েট লিস্টে। তবে সম্ভব না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।
চোখ ভালো রাখার জন্য নিয়মিত সানগ্লাস পরিধান করুন। চোখের ওপর চাপ পড়ে, এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন এবং চোখকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামে রাখুন। সম্ভব হলে চোখের কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। তবে চোখের কোনো সমস্যা অস্বাভাবিক মনে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।