প্রায় ছয় বছর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির নিয়োগে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (৫ জুন) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এ সংক্রান্ত রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী।সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম রিপন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান।
রিটকারীর আইনজীবী শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘এ রায়র ফলে বাতিল করা ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হয়েছে। এর ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির নিয়োগে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলো।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান বলেন, ‘আদালত বলেছেন কোটা থাকবে। এখন রায়ের অনুলিপি পেলে বুঝতে পারবো রায়টি কেবল মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, না গোটা কোটা পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করার বিষয়ে অ্যাটর্নি জোনরেলের দপ্তরে নোট দেওয়া হয়েছে।’
জানা যায়, ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো।
এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ছিল ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী কোটা ছিল ১ শতাংশ।
এই কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ছয় বছর আগে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানের আন্দোলন গড়ে তোলে চাকরি প্রত্যাশীরা। সে সময় এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন নুরুল হক নুরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার। সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনো কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয় কমিটি।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর ৩ অক্টোবর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে সেখানে কোটা বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরদিন ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করেন জনপ্রশাসন সচিব।
পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
পরে ২০২১ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন।
প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ওই বছর ৭ ডিসেম্বর রুল জারি করেন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা পরিপত্র কেন স্বেচ্ছাচারী ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
মন্ত্রীপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানসহ পাঁচ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সে রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।