চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গত ৭ মাস আগে বিয়ে হয় ইউনুস আলী ও জেসমিন আক্তারে। এর একমাস পর গর্ভবতী হন জেসমিন। চিকিৎসকরাও জানিয়েছিলেন গর্ভে সন্তান সুস্থ আছে। হঠাৎ পেটে ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হলে শনিবার সকালে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয় জেসমিনকে। চিকিৎসক জানান, বাচ্চা ভালো আছে। তবে রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর দুর্বলতা কাটাতে গ্লুকোজ স্যালাইন দেন। এরপর তার পেট ব্যথা আরও বেড়ে যায়। বিকেলে পুনরায় আলট্রা করার পর চিকিৎসক জানান, বাচ্চা মারা গেছেন।
পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী একটি কার্টনে করে বাড়িতে নেয়া হয় নবজাতকের ‘মরদেহ’। নেয়া হচ্ছিল কবর দেয়ার প্রস্তুতি। এমন সময় কার্টন খুলতেই কান্না শুরু করে নবজাতক। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
ইউনুস আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘সকালে বাচ্চা সুস্থ আছেন বলে জানান ডাক্তার শারমিন আয়েশা। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে বিকেলে পুনরায় চেকআপ করে বলেন, বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কাটনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়। পরে ৯টার দিকে কার্টনে করে বাচ্চাকে দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এরমধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী বাচ্চা, বাড়ির সবাই কার্টন খুলতে নিষেধ করেন। পরে কবর দেয়ার জন্য কার্টন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। এরপর মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালে ফোন করলে তারা বলেন, পাটিতে রাখেন বাচ্চা মারা যাবে। তখন আমি তাদের বকাঝকা করে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে উপস্থিত লোকজন আমার বাচ্চা জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। আমার বাচ্চা এখন চিকিৎসাধীন।’
এ বিষয়ে জানতে মিঠাছরা হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক গাইনি বিশেষজ্ঞ শারমিন আয়েশার মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, ‘রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চার ১ মিনিট নড়াছড়া ছিল। ১৫ মিনিট ওই চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা তাকে দেখতে আসেন। একপর্যায়ে কখন হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটি বাড়ি নিয়ে যায় আমরা বলতে পারবো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নবজাতক মারা গেছে তাদের বলা হয়নি। তারা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও জানি না। যদি মারা যেতো আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দেবো, রেজিস্টারে এন্ট্রি করবো।’
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে বাঁচার কথা না। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।