electricity

নেত্রকোনার গ্রামাঞ্চলে তিন দিন ধরে দেখা নেই বিদ্যুতের

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে নেত্রকোনার ১০ উপজেলার অনেক এলাকায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আজ বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত এসব এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে প্রয়োজনীয় কাজ না করতে পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।

স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে জেলার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায় এবং খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে জেলা শহরের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়। তবে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীসহ ১০ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি।

এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলার খালিয়াজুরীতে তৃতীয় ধাপের ‍উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আজ ওই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতেই এখন নলকূপের পরিবর্তে পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন করা হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্প দিয়ে পানি তোলার কাজ করা যাচ্ছে না। মুঠোফোন চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। অটোরিকশাও চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের খুবই ঝামেলা হচ্ছে।

খালিয়াজুরী নগর এলাকার বাসিন্দা হরিচরণ সরকার
খালিয়াজুরী নগর এলাকার বাসিন্দা হরিচরণ সরকার বলেন, ‘এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতেই এখন নলকূপের পরিবর্তে পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন করা হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্প দিয়ে পানি তোলার কাজ করা যাচ্ছে না। মুঠোফোন চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। অটোরিকশাও চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের খুবই ঝামেলা হচ্ছে।’

আটপাড়ার সুখাইড় গ্রামের রহমত আলী বলেন, তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যানবাহন ও মুঠোফোনে চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ব্যবসাসহ সার্বিক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে।

পিডিবি ও নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের মোট গ্রাহকসংখ্যা ৬ লাখ ৮৯ হাজার ১১৯। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক ৬ লাখ ৩৫ হাজার ১১৯ জন। পিডিবির ১টি উপকেন্দ্রসহ ১৬টি উপকেন্দ্র ও ৯৯টি ফিডার (লাইন) রয়েছে। ১০ উপজেলায় গ্রাহকের বর্তমানে পিক আওয়ারে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৮০ থেকে ১৮৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকের চাহিদা ১৪৬ থেকে ১৪৭ মেগাওয়াট। কিন্তু ঝড়ের কারণে পল্লী বিদ্যুতের অধিকাংশ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

জেলার পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাহমুদ এলাহী জানান, পিডিবির সব লাইনে গতকাল বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৭ মেগাওয়াট। তবে পাওয়া গেছে মাত্র ১৪ মেগাওয়াট।

পল্লী বিদ্যুতের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লাইন মেরামতের কাজ করছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। আশা করা যাচ্ছে, আজ ও কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মাসুম আহমেদ
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেত্রকোনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী ১৩২/৩৩ কেবি গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। আর সেখানে আশুগঞ্জ, বিবিয়ানা, কালিয়াকৈরসহ কয়েকটি পাওয়ার স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ আনা হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী শম্ভুগঞ্জের রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় নেত্রকোনায়।

বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা সচলের বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মাসুম আহমেদ জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দুই লাখ গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। অনেক স্থানে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে; খুঁটিও ভেঙে গেছে। এসব স্থানে নতুন খুঁটি বসানো ও লাইন মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের লোকজনও লাইন মেরামতের কাজ করছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। আশা করা যাচ্ছে, আজ ও কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

Scroll to Top