tourism

হোঁচট খাচ্ছে দেশের পর্যটন খাত

বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে পর্যটনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাছে রয়েছে দুটি জনবহুল দেশ, প্রতিবেশী ভারত ও চীন। এ ছাড়া আছে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, জাপান, যাদের নাগরিকরা অতি মাত্রায় পর্যটনে আগ্রহী। এসব দেশের বুদ্ধভক্ত নাগরিকরা বিপুল সংখ্যায় নেপাল, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে আসে।

বাংলাদেশ বুদ্ধ স্থাপনায় সমৃদ্ধ একটি দেশ। সঠিকভাবে আয়োজন করা গেলে প্রতিবছর কয়েক লাখ পর্যটক বাংলাদেশে আসতে পারে। বাংলাদেশের অন্যান্য আকর্ষণ তো আছেই।

নবনির্বাচিত সরকারের পর্যটনমন্ত্রীর পূর্বাভিজ্ঞতা আছে। এই প্রথম কোনো একজন মন্ত্রী উচ্চারণ করলেন, ‘দেশে বিদেশি পর্যটক আগমন ঘটাতে হবে।’ বাংলাদেশে গুটিকতক পর্যটন ব্যবসায়ী, যাঁরা প্রধানত বিদেশ থেকে পর্যটক আনতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাঁরা যেন সুড়ঙ্গের অপর প্রান্তে আলোর ছটা দেখতে পেলেন।

পর্যটন নিতান্ত বিনোদন নয়, এটি একটি শিল্প। এই শিল্প একই সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্ম সৃষ্টি করে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে একটি অবলম্বন।বাংলাদেশে পর্যটন কি এগিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর হলো ‘হ্যাঁ’ এবং তবে তা নিতান্ত অভ্যন্তরীণ ও বহির্গমনের পর্যটনের ক্ষেত্রে। বিদেশিদের আগমনের বেলায় এখনো নেতিবাচক সূচকে আছে।

যাঁরা বিদেশি পর্যটক নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের অবস্থা রবার্ট ব্রুসের মাকড়সার মতো। সুতা ধরে ওপরে উঠতে উঠতে গিয়ে বারবার পড়ে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল পর্যটন মৌসুমে রাজনৈতিক অস্থিরতা।

আর এর পরে বড় ধাক্কা হলো হোলি আর্টিজানের ঘটনা। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা, জ্বালাও-পোড়াও। যখন মনে হলো আবার শুরু হবে, ছুটে এলো অতিমারি কভিড। সারা বিশ্বের পর্যটনশিল্প ভূপাতিত হলো। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা এমন খাদে পতিত হয়েছেন যে ওই মাকড়সার মতো সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। নতুন সরকারের মন্ত্রীর ঘোষণা যেন তাঁদের দেহে প্রাণ সঞ্চার করল। তবে সরকার আসলে তা চায় কি না নতুন বাজেটে স্পষ্ট হবে।

পর্যটন খাত নিয়ে অনেকেরই ধারণার ঘাটতি আছে। ফলে সব সময় আমরা পেছনে পড়ছি। পর্যটন যে একটি অসাধারণ অর্থনৈতিক খাত, বিষয়টি বিশ্বময় স্বীকৃত। এ খাত একই সঙ্গে কর্মসংস্থান, উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, এমনকি বিদেশি বিনিয়োগ আনয়নে সাহায্য করে। এ খাতের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি শুধু শহরের অর্থনীতি নয়, এটি শহর থেকে মফস্বল ও গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছায়; যে কারণে অনেক দেশ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। গ্রামীণ পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।

বাংলাদেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বলা হলেও এ খাতে আমরা পিছিয়ে আছি। এমনকি পাকিস্তানও কভিড-পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০২৩-এ ১১৫ শতাংশ অগ্রগতি করেছে। শ্রীলঙ্কা ২০২৪ সালে এশিয়ায় অন্যতম পর্যটন আকর্ষণের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ এখনো এক অচেনা দোলাচালে দুলছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে নতুন সরকারের নতুন মন্ত্রী ফারুক খান এমপি তাঁর বলিষ্ঠ উচ্চারণকে সফল করার জন্য গুরুত্বসহকারে কাজ করবেন।

পর্যটন কোনো একক শিল্প নয়। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর সমন্বয় প্রয়োজন। প্রয়োজন বাজারজাতকরণ পর্যটন পণ্যের দেশের সীমা ছাড়িয়ে। আবার পর্যটন ও পরিবেশ এক সুতায় গাঁথা। এটি ছাড়া পর্যটন ক্ষতির মুখে পড়বে। কাজের পরিধি এত বিস্তৃত যে পর্যটনের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় প্রয়োজন। সেটি আপাতত সম্ভব না হলেও অন্তত একজন সচিব প্রয়োজন, যিনি পর্যটন নিয়ে কাজ করবেন।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড প্রচুর অর্থ ব্যয় করে একটি যথার্থ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। সেই নিরিখে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন এবং বাজেটে সে অনুযায়ী বরাদ্দ। আগামী পাঁচ বছরে ন্যূনপক্ষে ১০ লাখ পর্যটক যেন বাংলাদেশ ভ্রমণ করে, সেই লক্ষ্যে বাজেটে বরাদ্দ থাকা উচিত। সেটি থাকলে বোঝা যাবে সরকারের ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান নিছক কোনো পদক্ষেপ নয়। এ ছাড়া সরকারের উচিত বিনিয়োগ রোড শোতে পর্যটনকে অন্তর্ভুক্ত করা।

নতুন সরকারের নতুন বাজেট। মন্ত্রীর বক্তব্য অনুসরণ করে একটি পর্যটনবান্ধব বাজেট আমাদের প্রত্যাশা। প্রশাসনিক এবং কয়েকটি মেলায় অংশগ্রহণ যেন বাজেটের চেহারা না হয়। দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরা। পর্যটনে সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে তুলে ধরা যেন বাজেটের লক্ষ্য হয়। অনেকের ধারণা, দেশের ঢাক দেশে পেটালে আস্তে আস্তে বাইরে যাবে। গত ৫০ বছরে যা হয়নি, তা আজও হবে না। ভারতের কেরালা রাজ্য পর্যটন পণ্য প্রচারে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। বিদেশি পর্যটন কম্পানি, ভ্রমণ লেখক, ব্লগারদের অতিথি হিসেবে নিয়ে আসার মাধ্যমে বিশ্বে কেরালাকে পরিচিত করে তোলা হয়। সব মিডিয়াকে কাজে লাগানো হয়। আজ কেরালা ভারতের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।

Scroll to Top