amol2

যেসব আমল করলে সারা রাত ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যাবে

আল্লাহভীরু মুমিনদের প্রিয় অভ্যাস রাত জেগে ইবাদত করা। আল্লাহ তায়ালাও তার প্রিয় বান্দাদের ইবাদতের দৃশ্য দেখতে খুব পছন্দ করেন, তার ভয়ে ও প্রেমে রাতের অন্ধকারে আরামের ঘুম ছেড়ে কেউ ইবাদত করছে, দুহাত তুলে চোখের পানি ফেলছে, নামাজ-তেলাওয়াতে ও জিকিরে মশগুল হচ্ছে।

পবিত্র কুরআনুল করিমে আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় হাবিব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি এই মর্মে নির্দেশ জারি করেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থান—মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাতে ওঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল।’ (সুরা : মুজজাম্মিল, আয়াত : ৬)

আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অবশ্যই রাতে ইবাদত করবে। কারণ এটা তোমাদের আগের নেককারদের অভ্যাস। এবং এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় আর পাপের কাফফারাস্বরূপ। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬১৯)

আল্লাহ তাআলা তার বান্দার প্রতি অধিক দয়াবান। তাই তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আমাদের এমন কিছু আমল বলে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে আমরা সহজেই রাতের ইবাদতের সওয়াব অর্জন করতে পারি।

ফজর ও এশা জামাতে আদায় করা : উসমান ইবনু আফফান (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য অর্ধরাত (নফল) নামাজ আদায়ের সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য সারা রাত (নফল) নামাজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২২১)

রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা : আবু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সুরা বাকারার শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দুটি তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ দুটি আয়াত যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৪০০৮)

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, অর্থাৎ এই দুটি আয়াত সারা রাত ইবাদতের সওয়াব প্রাপ্তিতে যথেষ্ট।

রাতে ১০০ আয়াত পাঠ : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় এক শ আয়াত পড়ে, তার আমলনামায় পুরো রাত ইবাদত করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। (ইবনে খুজাইমাহ, হাদিস : ১১৪২)

উত্তম চরিত্র : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুসলমান শরিয়তের ওপর আমলকারী হয় সে নিজের ভদ্র স্বভাব ও উত্তম চরিত্রের কারণে ওই ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করে, যে রাতে নামাজে অনেক বেশি পরিমাণ কুরআন পাঠ করে এবং অনেক বেশি রোজা রাখে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৬৪৮)

আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি, মুমিন নিজ সচ্চরিত্র দ্বারা রোজাদার ও রাতভর ইবাদতকারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)

বিধবা নারীকে সাহায্য করা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়াম পালনকারীর মতো। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)

সীমান্ত পাহারা দেয়া : সালমান ফারসি (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথে এক দিন বা এক রাত সীমানা পাহারা দেয়া, এক মাসের সাওম পালন ও সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর ওই প্রহরী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে তার আমলের সওয়াব অবিরত পেতে থাকবে, তার জন্য সর্বক্ষণ রিজিক (জান্নাত থেকে) আসতে থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা থেকে মুক্তি পাবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৯১৩)

কিয়ামুল লাইলের নিয়তে ঘুমানো : আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার নিয়তে বিছানায় আসে, কিন্তু তার চক্ষুদ্বয় নিদ্রা প্রবল হয়ে যাওয়ায় ভোর পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে থাকে, তার জন্য তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব লেখা হবে, আর আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিদ্রা তার জন্য সদকাস্বরূপ হয়ে যাবে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৭৮৭)

Scroll to Top