বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার প্রবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি পদক নীতিমালা-২০২৪’-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।সোমবার (২০ মে) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭৩ সালের ২৩ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। এটির ৫০ বছর পূর্তি আমরা গত বছর উদ্যাপন করেছি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শান্তি পুরস্কার তিনি প্রবর্তন করতে চান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজ একটি নীতিমালা আমরা উপস্থাপন করেছি। মন্ত্রিসভা সেটি আজ অনুমোদন করেছে।’
‘এই নীতিমালার আওতায় বাংলাদেশ ও বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত বা বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে কয়েকটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি পুরস্কার দেয়া যাবে’, যোগ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা, যুদ্ধ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ ও অবদান রাখা, দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখা, টেকসই সামাজিক পরিবেশগত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন– পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে এ ক্ষেত্রগুলো বিবেচনায় নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, ‘৫০ গ্রাম ওজনের ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের একটি পদক এবং ১ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ মূল্যের পুরস্কার দেয়া হবে। একইসঙ্গে একটি সনদপত্র দেয়া হবে।’
‘পুরস্কারটি প্রতি দুই বছরে একবার দেয়া হবে। পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে প্রস্তাব নেয়া যাবে। কারা কারা প্রস্তাব করতে পারবেন নীতিমালায় সেটারও একটা বর্ণনা দেয়া আছে। একটি দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান বা সেই দেশের সংসদ সদস্যরা প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। নোবেল বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি কারো নাম প্রস্তাব করতে পারবেন’, জানান মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি যত দূতাবাস রয়েছে সেইসব দূতাবাসের প্রধানরা বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা পুরস্কারের জন্য নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশন বা দূতাবাসের প্রধানরাও প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। জাতিসংঘের কোনো সংস্থা প্রধানও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। তবে কোনো ব্যক্তি নিজে পুরস্কারের জন্য দাবি জানাতে পারবেন না।’
নীতিমালা অনুযায়ী একটি জুরি বোর্ড গঠন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। নিরপেক্ষ ও খ্যাতিসম্পন্ন লোকদের দ্বারাই জুরি বোর্ড গঠিত হবে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হবে। ২৩ মে বা কাছাকাছি সময়ে এই পুরস্কার দেয়া হবে।
অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেবে। আগামী বছরই (২০২৫) প্রথমবারের মতো পুরস্কার দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিসভা থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, ‘নীতিমালা দিয়ে কাজটি যাতে শুরু করা হয় এবং এটিকে যাতে পরবর্তী সময়ে আইনে রূপান্তর করা হয়। আইনের মধ্যে একটি তহবিল তৈরি করতে বলা হয়েছে যে তহবিলে সরকার বা বাইরের লোক যে কেউ সেখানে অনুদান দিতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে আমরা সেই তহবিল থেকেই ব্যয়ভারটা নির্বাহ করতে পারব। সে পর্যন্ত সরকারই এই ব্যয়ভার বহন করবে।’