চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত ‘বে টার্মিনাল প্রকল্পে’ এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বা এডি পোর্টস গ্রুপ। এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এডি পোর্টস গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা স্মারক হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে এই চুক্তি সই হয়। এর আগে গত বছর এ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল এডি পোর্টস গ্রুপ।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে এই বিনিয়োগ করবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠানটি। বে টার্মিনালে চারটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বন্দরের। এর মধ্যে দেড় হাজার মিটার লম্বা মাল্টিপারপাস টার্মিনাল (জাহাজ থেকে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো-নামানোর স্থাপনা) বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বে টার্মিনালের চারটি টার্মিনালই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে নির্মাণ করা হবে। বাকি তিনটি টার্মিনালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল একটি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড একটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠান দুটি ১৫০ কোটি ডলার করে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে গ্যাস ও তেল খালাসের টার্মিনালে ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায় গ্রুপটি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বে টার্মিনাল প্রকল্পে টার্মিনাল ও সুযোগ-সুবিধা নির্মাণে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।
গতকাল স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল ও আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (পোর্টস ক্লাস্টার) সাইফ আল মাঝরোয়েই। এ সময় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল, আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (আন্তর্জাতিক অফিস) আহমেদ কামাল মুতাওয়া ও আবুধাবি পোর্টসের স্থানীয় অংশীদার সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে তথা বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হবে। এডি পোর্টস গ্রুপের সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে।
সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে এখন দেশের তিনটি বন্দর ব্যবহৃত হচ্ছে। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা—এই তিন বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন হয় প্রায় ৮৭ শতাংশ। সরকার এখন এই বন্দর ঘিরে নতুন তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ নির্মাণ শেষে এখন চালুর অপেক্ষায় আছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। শুধু পিছিয়ে আছে বে টার্মিনাল প্রকল্প।
জানতে চাইলে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের স্থানীয় অংশীদার সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন বলেন, আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের বিনিয়োগের মাধ্যমে বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আবুধাবি ফেডারেল সরকারের এই প্রতিষ্ঠান লজিস্টিক খাতে এক ছাদের নিচে সব ধরনের সেবা প্রদান নিয়ে কাজ করে।