ফ্রান্সে গতকাল মঙ্গলবার প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে কয়েদি মোহামেদ আমরাকে ছিনিয়ে নিয়েছে বন্দুকধারীরা। এ ঘটনার পর আসামি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মার্সেইতে একটি অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোহামেদ আমরা। এ শহরে মাদক পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধী চক্রগুলোর মধ্যে প্রায়ই সহিংসতার ঘটনা ঘটে থাকে।
‘দ্য ফ্লাই’ নামে পরিচিত আমরাকে গতকাল মঙ্গলবার প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে বিচার কার্যক্রম শেষে তাঁকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কারাগারের দিকে নেওয়ার সময় টোল বুথে একটি গাড়ি এসে প্রিজন ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এরপর কয়েকজন বন্দুকধারী গুলি ছুড়তে থাকেন এবং আমরাকে ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় দুই কারা কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হন আরও কয়েকজন।
কৌঁসুলিরা বলেছেন, ৩০ বছর বয়সী ওই আসামিকে ১০ মে চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। একটি অপহরণের ঘটনা এবং সে ঘটনায় একজনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মার্সেইর কৌঁসুলিরাও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।
আমরাকে রুয়েনের কাছে ভাল দে রেউইল কারাগারে রাখা হয়েছিল। নতুন অভিযোগ দায়ের হওয়ায় বিচারকাজে গতকাল তাঁকে কারাগার থেকে পার্শ্ববর্তী আদালতে নেওয়া হয়েছিল।
কৌঁসুলি লরা বেকিউ বলেন, আমরা ‘নিবিড় নজরদারিতে’ রাখা কোনো কয়েদি ছিলেন না। অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে বিবেচিত কারাবন্দীদের নিবিড় নজরদারিতে রাখা হয়ে থাকে।
তবে কারাগার থেকে আদালতে নেওয়ার সময় আমরাকে ‘তৃতীয় পর্যায়ের পাহারায়’ রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ তাঁর সঙ্গে পাঁচজন কারা কর্মকর্তা ছিলেন।
আমরার আইনজীবী হুগুয়েস ভিজিয়ার বলেছেন, তাঁর মক্কেল সম্প্রতি কারাগারের লোহার শিক কেটে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। আইনজীবী বলেছেন, তিনি এমন ‘অমার্জনীয়’ এবং ‘উন্মত্ত’ সহিংসতার ঘটনায় মর্মাহত।
বিএফএমটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইনজীবী ভিজিয়ার বলেন, তাঁর এক সহযোগী মঙ্গলবার সকালে আমরার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেখানে তাঁরা এক ঘণ্টার মতো কথা বলেছেন। সহযোগী ওই আইনজীবীর কাছে সবকিছু স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছিল।
ভিজিয়ার মনে করেন, মঙ্গলবার যে তাঁকে আদালতে নেওয়া হবে, তা আসামি আমরা জানতেন। তিনি হয়তো অন্যদের এ কথা বলেছিলেন।
হামলাকারীদের দেখে মনে হয়েছে তারা আগে থেকেই সবকিছু জানত এবং সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।
এ ঘটনায় মোহামেদ আমরার মা-ও হতবাক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ও আমার সঙ্গে কথা বলে না। ও আমার ছেলে। কিন্তু ও আমার সঙ্গে কোনো ব্যাপারেই কথা বলে না।’
মা বলেন, তিনি কয়েকটি কারাগারে ছেলের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু ‘সে আমাকে কোনো কিছুরই আভাস দেয়নি। আমি বুঝতে পারছি না।’
আমরার মা বলেন, মঙ্গলবার অতর্কিত ওই হামলার খবর শুনে তিনি মর্মাহত হয়েছেন। আরটিএলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘আমার এতটাই খারাপ লেগেছে যে আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছি। এভাবে কীভাবে মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া যেতে পারে?’
চুরির দায়ে আইনি প্রক্রিয়া চলার সময় আমরাকে মার্সেই, প্যারিস ও রুয়েনে আলাদা কারাগারে রাখা হয়েছিল। চুরির দায়ে তাঁর ১৮ মাসের কারাদণ্ড হয়।
বিএফএমটিভির তথ্য বলছে, এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ১৩টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এর বেশির ভাগই ছোটখাটো অপরাধ। যেমন লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো, চুরি, পুলিশ থামতে বলার পরও না থামা।
তবে রুয়েনের কাছের একটি এলাকায় এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ উঠেছে মোহামেদ আমরার বিরুদ্ধে। মার্সেইতে অপহরণের পর ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। এ অভিযোগের মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, গুরুতর অপরাধেও আমরার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।