Gaja

গাজায় আগ্রাসন: নেতানিয়াহুর সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক তলানিতে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাইডেন প্রশাসন বলছে, গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে ইসরায়েল যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সেই সঙ্গে তারা হয়তো মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এ প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দূরত্ব ক্রমে বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ইসরায়েল ইস্যুতে এ ধরনের পদক্ষেপ বিরল।

বিবিসি লিখেছে, শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠায় দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। এতে বলা হয়, গাজা যুদ্ধের সময় কিছু কিছু ঘটনায় ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে থাকতে পারে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করে এমনটা করতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ইসরায়েল কতটা অসংগত কারণে ব্যবহার করেছে, তা যাচাই জরুরি। কী মাত্রায় এসব অস্ত্র গাজায় ব্যবহার করা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে নেই। শুধু গাজা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করে আরও অন্তত ছয়টি দেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বেসামরিক ক্ষতি কমাতে ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকে অকার্যকর এবং অপর্যাপ্ত বলে বর্ণনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর লক্ষ্য করেছে, যুদ্ধ শুরুর প্রথম মাসগুলোতে গাজায় মানবিক সহায়তা সর্বাধিক করতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রচেষ্টা ছিল, তাতে পূর্ণ সহযোগিতা করেনি ইসরায়েল।

প্রতিবেদন প্রস্তুতকারীদের একজন মার্কিন কূটনীতিক ডেভিড স্টারফিল্ড বলেন, ‘গাজা যুদ্ধের প্রথম থেকেই ইসরায়েলের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। পুরো বিশ্ব দেখেছে, এটা অন্যসব যুদ্ধ কিংবা সংঘাতের মতো ছিল না। প্রতিবেদনে আমরা একদম খোলামেলাভাবে প্রতিটি বিষয়ের বিশ্বাসযোগ্য মূল্যায়ন তুলে আনার চেষ্টা করেছি।’
রাফাহতে ১০ লাখের বেশি শরণার্থী আছে। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, এরই মধ্যে রাফাহতে লিফলেট ফেলে লোকজনকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।

এর আগে বাইডেন হুঁশিয়ারি দেন, রাফাহতে অভিযান হবে ‘চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম’। জবাবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, কেউ পাশে না থাকলেও ইসরায়েল একা লড়বে। গত সোমবার থেকে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ রাফাহ ছেড়েছে। জাতিসংঘ বলছে, অব্যাহত বোমা বর্ষণের মধ্যে ইসরায়েলের ট্যাঙ্কবহর শহরের আরও কাছে এসেছে।

এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দিতে একটি খসড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, এ পদক্ষেপ ছিল অত্যন্ত প্রতীকী, যা ফিলিস্তিনের সঙ্গে বিশ্ববাসীর ক্রমবর্ধমান সংহতিকে প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে তিরস্কারও করেছে।

প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৩ ভোট পড়ে; ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৯টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়। ভোটদানে বিরত ছিল ২৫ দেশ। কেন যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে আলোচনার ভিত্তিতে হওয়া উচিত।

অন্যদিকে রাফাহ শহরে ইসরায়েলের হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে এ আবেদন করা হয়েছে বলে আদালতের এক বিবৃতিতে বলা হয়। এ নিয়ে তৃতীয়বার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাছে গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধে জরুরি ব্যবস্থা চেয়ে আবেদন করল দেশটি। গণহত্যার অভিযোগ করায় দক্ষিণ আফ্রিকার নিন্দা করেছে ইসরায়েল। আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলের অভিযানে ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার জন্য চরম ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।

নিহত ৩৫ হাজার ছুঁই ছুঁই

গত ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৯৭১-এ পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ৭৮ হাজার ৬৪১ জন। হতাহতের অধিকাংশই নারী ও শিশু। বহু ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আছেন।

Scroll to Top