স্ত্রীর সঙ্গে মান-অভিমানের জেরে গত বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ফারুক হোসেন (৩৫) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি। দুবাইয়ের আল কুসাইস এলাকার একটি ভবন থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ফারুক হোসেনের বাড়ি কুমিল্লায়।
গত চার মাসে ফারুকের মতো আরব আমিরাতে অন্তত ১২ বাংলাদেশি আত্মহত্যা করেন। এর মধ্যে দুবাই ও উত্তর আমিরাতে ১০ এবং আবুধাবিতে আত্মহত্যা করেন দু’জন। প্রবাসীরা বলছেন, আত্মহননকারীর অধিকাংশই ঋণের চাপ, পারিবারিক কলহ, মান-অভিমান, বেতন না পাওয়া ও কর্মহীনতার কারণে হতাশায় ভুগছিলেন। একাকিত্বের কারণেও কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কাউন্সেলর আব্দুস সালাম এবং আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর লুৎফুন নাহার নাজীম জানান, দুবাই ও উত্তর আমিরাতে গত জানুয়ারি থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত ১০ প্রবাসী বাংলাদেশি আত্মহত্যা করেন। গত বছর আত্মহত্যা করেন ১৪ জন। অন্যদিকে আবুধাবিতে গত মার্চ ও এপ্রিলে দু’জন এবং গত বছর পাঁচ প্রবাসী আত্মহত্যা করেন।
গত বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে আত্মহত্যা করা ফারুক হোসেন যে ভবনটিতে থাকতেন, সেখানে অধিকাংশই ট্যাক্সি চালকের বসবাস। ফারুক ২০১৫ সালে দুবাই ট্যাক্সি কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে আমিরাতে আসেন। এরপর থেকে তিনি ট্যাক্সি চালাতেন। সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। কয়েক দিন ধরে স্ত্রীর সঙ্গে কথাকাটাকাটি হচ্ছিল তাঁর। মাঝে মাঝে বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়েও কথা বলতে শোনা যেত। একদিকে স্ত্রীর সঙ্গে কলহ, অন্যদিকে বেকার জীবনযাপনের হতাশার কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল আবুধাবির একটি ১২ তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন লক্ষ্মীপুর সদরের বাঞ্ছানগরের শিবলি সাদিক (৩৮)। প্রতিবেশী মোহাম্মদ মনির জানান, শিবলি দীর্ঘদিন ধরে আবুধাবিতে ব্যবসা করতেন। কিছুদিন আগে দেশ থেকে ঋণ নিয়ে আমিরাতে আবাসন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। সম্প্রতি তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার ওই আবাসন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের সব অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। এতে হতাশ হয়ে পড়েন শিবলি।
গত ৩০ মার্চ আবুধাবিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সন্দ্বীপের মুসাপুরের মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি দেশটির আল আইন শহরে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া দেশে ছুটিতে থাকাকালে আত্মহত্যা করেন দুবাই প্রবাসী মাসুদ রানা। দুবাই ট্যাক্সি কোম্পানিতে কর্মরত রানা ছুটিতে নিজের এলাকা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী গিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের মাত্র ৯ দিনের মাথায় আত্মহত্যা করেন তিনি।
প্রবাসীরা বলছেন, অধিকাংশ বাংলাদেশি শ্রমিক প্রবাসে একা থাকেন। কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন চাপ ও পারিবারিক কলহের কারণে প্রতিনিয়ত তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। এতে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ঝুঁকি কমাতে এবং প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।