বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চলে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের গাইনী বিভাগে চিকিৎসারত রহিমা বেগম নামের এক রোগীর শরীরে \’এ পজিটিভ\’ রক্তের পরিবর্তে \’বি পজিটিভ\’ রক্ত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্য গ্রুপের রক্ত পুশ করায় রোগীর অবস্থায় সংকটাপন্ন হওয়ায় রোগীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপালে প্রেরণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ১৫ মার্চ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে।
লালমনিরহাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরপর দুবার রোগীর শরীরে অন্য গ্রুপের রক্ত প্রবেশ করার ফলে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। এদিকে এমন একটি ঘটনার চার দিনেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। ক্ষোভের অংশ হিসেবে স্থানীয় মাহমুদুল হাসান মামুন স্মৃতি সংসদসহ আরো তিনটি সামাজিক সংগঠনের উদ্যেগে শনিবার (২০ মার্চ) সকালে সদর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রোগীর স্বজন ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা এ ঘটনায় প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ জাহিদুল ইসলামকে দায়ী করেন এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের শাস্তির দাবি জানান।
জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি গ্রামের দিনমজুর রব্বানী ইসলামের স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৫) শারিরীক রক্তক্ষরণ জনিত কারণে গত ১৪ মার্চ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন। ওই দিনই তাকে রক্ত দিতে হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। প্যাথলজি বিভাগে রহিমা বেগমের রক্ত পরীক্ষা করে জানানো হয় তার রক্তের গ্রুপ “বি পজিটিভ”। এরই মাঝে সাকলাইন সোহান নামের একজন ‘বি’ পজিটিভ রক্তদাতা এক ব্যাগ রক্ত দান করেন। তারপর ওই রক্ত রোগীর শরীরে প্রবেশ করার পরেই রোগী অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, যে ডোনারের রক্ত দেওয়া হয়েছে সেই রক্তের তাপমাত্রা ও রোগীর তাপমাত্রা এক না হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এরপরের দিন রোগীর আত্মীয় মোকলেছুর রহমান মুকুল নিজেও আরেক ব্যাগ “বি পজিটিভ” রক্ত দান করেন। এই রক্ত প্রয়োগ করার পরে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন রোগী রহিমা বেগম । তারপর প্যাথলজি বিভাগ থেকে জানানো হয় রক্তের গ্রুপ ভুল হওয়ার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রোগীর শারিরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে তাকে ১৭ মার্চ রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
রোগীর স্বামী রব্বানী ইসলাম জানান, তার স্ত্রী রহিমা বেগমের অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম জানান, প্যাথলজি বিভাগের সহকারী মোজাফ্ফরের ভুলের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। তবে প্যাথলজি বিভাগের সহকারী মোজাফ্ফরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ এ বিষয়টি ভালো জানেন।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মঞ্জুর মোর্শেদ দোলন বলেন, এ ঘটনায় শনিবার (২০ মার্চ) সিনিয়র কনসাল্টেন্ট (সার্জারী) ডা. আব্দুল হাদীকে প্রধান করেন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পরেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।