তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই আজ রবিবার থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নয় অভিভাবকরা। তারা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষার্থী স্কুলে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি চালুর জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষার দাবি জানান।
দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় একদিকে যেমন ক্লাসে যাওয়ার তাড়া, তেমনি রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথারীতি ক্লাস চলছে। সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে খুলে দেয়া হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় বন্ধ রয়েছে শুধু প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি হবে না। এমনকি শ্রেণিকক্ষের বাইরের কোনো কাজও শিক্ষার্থীদের দিয়ে করানো যাবে না।
গরমে যেন ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের কষ্ট না হয় সেজন্য প্রাথমিকের ক্লাস শুরু হবে সকাল ৮টায়। ছুটি হয়ে যাবে দুপুরের আগেই বেলা ১১টায়। গতকাল শনিবার (২৭ এপ্রিল) এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শনিবার (২৭ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আক্তারুন্নাহার স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, চলমান তাপদাহের কারণে কোমলমতি শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টারসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
১. আগামী ২৮ এপ্রিল রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকার্যক্রম চলমান থাকবে।
২. এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়সমূহ প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে।
৩. দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়সমূহ প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকবে।
৪. তাপদাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে।
৫. উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো রুটিন বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা ভিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাপ্তাহিক রুটিন প্রণয়ন করবেন।
৬. প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
তাপদাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে আসার পূর্ব-পর্যন্ত এবং পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত উল্লিখিত সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আগামী ২৮ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় যে শিখন ঘাটতি হয়েছে তা পূরণ করতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চলবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার ছুটি দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগের নিয়মেই প্রাথমিক বিদ্যালয় চলবে। অর্থাৎ শনিবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি থাকবে। সূত্র আরো জানিয়েছে তীব্র তাপ পরিস্থিতির মধ্যে আজ থেকে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুুললেও দেশের অনেক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান থাকবে অনলাইন ক্লাস প্রক্রিয়া।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও কলেজ) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, বরিশাল, কুমিল্লা এবং শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পাঠদান চলছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পাঠদান চললেও প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাথে আজ থেকে খুলছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো। আরো খুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজও।
এ ছাড়া অনলাইনে ক্লাস নেয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুললেও বেসরকারি এসব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্ব স্ব বডি সভা করে অনলাইন ক্লাস, প্রয়োজনে বন্ধের সিদ্ধান্তও নিতে পারবে। এর আগে, গত ২০ এপ্রিলে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়।