ফিলিস্তিনের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেস্কা আলবানিজকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যার বিষয়ে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে তিনি একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
তাতে তিনি বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরুর পর গত পাঁচ মাসের হত্যাযজ্ঞ বিচার-বিশ্লেষণ করে এটা বলা যেতে পারে গাজায় ইসরাইলি বাহিনী জাতিহত্যা চালাচ্ছে। এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। এরপরই তাকে হুমকি দেওয়া হয়। গতকাল (বুধবার) হুমকি পাওয়ার কথা জানান এ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ফ্রান্সেস্কার উপস্থাপন করা প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘এনাটমি অব জেনোসাইড’।
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা গাজায় ইসরাইলি অপরাধ তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন- এমন একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে যা ইচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালা বিকৃত করার ইসরাইলি পদক্ষেপ ঠেকাবে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সহিংসতা, গণহত্যা ও জাতিহত্যার চেষ্টা বন্ধ করবে।
একটি তথ্যে জানা গেছে, ইসরাইলের পাশাপাশি আমেরিকাও জাতিসংঘের এই কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার সঙ্গে জড়িত। তারা ঐ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইসরাইলি স্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহণের অভিযোগ এনেছে।
আলবানিজের বিবৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে, বর্তমানে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে সেগুলো গাজায় গণহত্যা ও জাতিহত্যার জন্য ইসরাইলকে জবাবদিহি করতে সক্ষম নয়। কারণ এসব গণহত্যা মার্কিন সরকারের রাজনৈতিক ও সামরিক ছত্রছায়ায় সংঘটিত হচ্ছে। মার্কিন মিডিয়ার সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতাও রয়েছে ইসরাইলের সঙ্গে।
কিছুদিন আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে, কিন্তু ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী পশ্চিমা দেশগুলোর সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে গাজা উপত্যকা ও জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে নিরুপায় মজলুম ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী গাজায় ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৩২ হাজার ফিলিস্তিনি শহীদ ও ৭৫ হাজার আহত হয়েছেন।
১৯১৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী শাসকের পরিকল্পনায় বিভিন্ন দেশ থেকে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইহুদিদের অভিবাসনের মাধ্যমে আজকের ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটি তৈরি করা হয় এবং ১৯৪৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর অস্তিত্ব ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে গোটা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে বহু গণহত্যা এবং জাতিগত নিধন অভিযান চালিয়েছে ইসরাইল।