যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত সায়েন্স মিউজিয়াম সম্প্রতি ‘এনার্জি রেভোল্যুশন: দ্য আদানি গ্রিন এনার্জি গ্যালারি’ শীর্ষক একটি গ্যালারি চালু করেছে। বিশ্ব জ্বালানি ব্যবস্থায় কীভাবে আরও টেকসই উপায়ে জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণ কমানো যায় এবং যত দ্রুত সম্ভব জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা কমিয়ে আনতে কাজ করা যায়, সে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সায়েন্স মিউজিয়ামে এ নতুন গ্যালারিটির উন্মোচন করা হয়।
যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমসাময়িক ও ঐতিহাসিক অনেক বিষয়বস্তু ডিজিটাল স্ক্রিনের মাধ্যমে প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। মানুষের কল্পনা ও উদ্ভাবনের পথ পরিক্রমায় কীভাবে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের আকার-আকৃতি পাল্টেছে, দর্শনার্থীরা সেসব দেখতে পারবেন। এছাড়াও, ভবিষ্যতে জ্বালানির ব্যবহারে আমরা কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারি, সে বিষয়েও তারা ধারণা পেতে পারেন।
আদানি গ্রিন এনার্জির এ গ্যালারিতে ‘ফিউচার প্ল্যানেট’, ‘ফিউচার এনার্জি’ ও ‘আওয়ার ফিউচার’- এ তিনটি বিভাগে চলতি শতাব্দির হুমকিগুলো (চ্যালেঞ্জ) সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ‘ফিউচার প্ল্যানেট’ বিভাগে এসে দর্শনার্থীরা দেখতে পারবেন, আমাদের পৃথিবী সম্পর্কে জানতে কীভাবে বিজ্ঞানীরা জটিল কম্পিউটার-ভিত্তিক মডেল ব্যবহার করেছেন এবং ভবিষ্যত জলবায়ু কেমন হতে পারে সে সম্পর্কেও তারা সম্যক ধারণা পাবেন। ‘ফিউচার এনার্জি’ বিভাগে পৃথিবীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না, এমন নতুন ধরনের জ্বালানি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যত বিশ্বের জ্বালানি পরিস্থিতি কেমন হবে, এ সম্পর্কে এখনকার শিশুদের চিন্তা-ভাবনা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে ‘আওয়ার ফিউচার’ বিভাগে।
গ্যালারির মূল অংশে রয়েছে ‘অনলি ব্রিদ’ শীর্ষক একটি চলমান ভাস্কর্য। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনে প্রকৃতির শক্তিমত্তার গুরুত্বকে তুলে ধরা হয়েছে এ ভাস্কর্যের মাধ্যমে। গ্যালারিতে নিউক্লিয়ার, হাইড্রোজেন ও সোলার থেকে শুরু করে উইন্ড ও টাইডাল পাওয়ারের মতো উল্লেখযোগ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এ সকল জ্বালানি প্রযুক্তির ব্যবহারে যাতে কম কার্বন নিঃসরণ করা যায়, সে চেষ্টার প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে স্কটল্যান্ডের নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানি অরবিটা মেরিন পাওয়ারের তৈরি একটি ৭ মিটার লম্বা টাইডাল টারবাইন ব্লেড এবং ১৮৯৭ সালে লন্ডনে তৈরি হওয়া প্রথম ইলেকট্রিক ট্যাক্সি বার্সে ক্যাবও রয়েছে।
ভারতের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রিন এনার্জির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সাগর আদানি বলেন, “বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানি হিসেবে, আমরা নেট জিরোর দিকে অগ্রগতি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ – এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শিক্ষার চেয়ে বড় কোনো সম্পদ নেই। এ গ্যালারির স্পনসরশিপের মাধ্যমে, আমাদের তরুণ, বিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবকদের পরিচ্ছন্ন শক্তির মাধ্যমে পরিচালিত ভবিষ্যতের কল্পনা করতে এবং কার্বন-মুক্ত বিশ্ব গড়তে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্য রয়েছে।”
সায়েন্স মিউজিয়াম গ্রুপের ডিরেক্টর ও চিফ এক্সিকিউটিভ স্যার ইয়ান ব্ল্যাচফোর্ড বলেন, “এক সপ্তাহে এখানে এক মিলিয়ন শিশুসহ মোট ২.২৫ মিলিয়ন যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা ঘুরতে এসেছে। সামনে আরও যারা পরিদর্শন করতে আসবে, অসমান্য এ গ্যালারিটি তাদের মধ্যে আরও টেকসই জ্বালানির উৎপাদন এবং এর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার প্রতি কৌতূহল জাগিয়ে তুলবে।”
লন্ডনভিত্তিক বিখ্যাত আর্কিটেক্ট ফার্ম ‘আননোন ওয়ার্কস্’ এর পুরস্কার প্রাপ্ত স্থপতিদের দিয়ে এনার্জি রেভোল্যুশন শীর্ষক এ গ্যালারির ডিজাইন করা হয়েছে। এর টেকসই ডিজাইনের একটি মূল উপাদান ছিল সায়েন্স মিউজিয়ামের আগের অবজেক্ট-স্টোর থেকে নেয়া অপ্রয়োজনীয় কিছু তাকের পুনঃব্যবহার। এছাড়া, গ্যালারির কার্বন ফুটপ্রিন্ট নিরীক্ষণ করা হয়েছে এবং যেখানে সম্ভব সেখানে পুনর্ব্যবহারযোগ্য অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে।