রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর একটি কনসার্ট হলে গণহত্যার পর রাশিয়া রোববার (২৫ মার্চ) জাতীয় শোক দিবস পালন করে। কনসার্ট হলের এই হামলায় ১৩৭ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছে। ইউরোপে সবচেয়ে মারাত্মক এই হামলার দাবি করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ‘বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার’ পেছনে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার অঙ্গীকার করে বলেছেন, কিছু বন্দুকধারীকে ইউক্রেনে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ক্রেমলিনের বরাতে রুশ বার্তাসংস্থা আরটি জানিয়েছে, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন সরাসরি জড়িত।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তি জানাচ্ছে, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়েছে এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিনোদন অনুষ্ঠান আর বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ রেখেছে। জনতা লাইন ধরে ধীর গতিতে হেঁটে বিধ্বস্ত কনসার্ট হল, ক্রোকাস সিটি হলের কাছে তৈরি একটি অস্থায়ী স্মৃতি চিহ্নে ফুল রেখে যায়।
কিয়েভ এই ঘটনার সঙ্গে কোন ধরণের সংযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করেছে এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ তুলে বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে পুতিন দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।
পুতিন আক্রমণ সম্পর্কে তার প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে আইএসের দায় স্বীকারের বিবৃতির কথা উল্লেখ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা নিশ্চিত যে ইসলামিক ষ্টেট-এর সাথে সম্পৃক্ত গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে।
ছদ্মবেশী বন্দুকধারীরা মস্কোর উত্তর উপশহর ক্রাসনোগর্স্কের সিটি হলে শুক্রবার সন্ধ্যায় হামলা চালালে অন্তত ১৩৭ জন নিহত হয় এবং পরে তারা সেখানে ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় আট শিশুসহ অন্তত ১৮৭ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার টেলিগ্রামে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী লিখেছে, ‘ইসলামের সাথে যুদ্ধরত দেশগুলোর সঙ্গে’ ‘বিক্ষুব্ধ যুদ্ধের’ অংশ হিসাবে চার আইএস যোদ্ধা ‘মেশিনগান, একটি পিস্তল, ছুরি এবং ফায়ারবোমা সজ্জিত হয়ে এই হামলা চালায়।
প্রায় দুই দশকের মধ্যে এটি রাশিয়ায় সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। রাশিয়ার কর্মকর্তারা মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন, হাসপাতালে আহত ১০০ জনের বেশি ভর্তি রয়েছেন।
রাশিয়ার বড় অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি বলেছে, শনিবারও উদ্ধারকারীরা পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল। জরুরি পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করেছে। আগুনে পোড়ার কারণে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া জটিল হয়ে উঠেছে।
মস্কোর কনসার্ট হলে বন্ধুকধারীদের হামলায় বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বিবৃতিতে বলেন, মার্চের শুরুতে মস্কোতে ‘বড় জমায়েত’ লক্ষ্য করে একটি সম্ভাব্য হামলা সম্পর্কে রুশ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছিল।
কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি এটি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, কিউবাসহ বিশ্বনেতারা।