ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সপ্তাহ খানেক আগে যুদ্ধবিরতি চুক্তির নতুন প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর। সেই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়াও দেয় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সেক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেয় তারা। তবে হামাসের শর্ত মেনে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করা ‘অসম্ভব’ বলে জানিয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী একথা জানান। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির শর্ত প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, অঞ্চলটিতে হামাসের বিরুদ্ধে বিজয়ের অতি সন্নিকটে আমরা। গাজায় ইসরায়েলের একমাত্র লক্ষ্য হলো চূড়ান্ত বিজয়।
নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাবে জুড়ে দেয়া শর্তগুলো খুবই ‘উদ্ভট’। ফলে তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো দরকার নেই। আমরা সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত বিজয় ছাড়া অন্য কোনো সমাধান দেখছি না।
সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হামাস যদি গাজায় আক্রমণ অব্যাহত রাখে তাহলে সেখানে গণহত্যা চলবে। শুধু সময়ের অপেক্ষামাত্র।
এদিকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার। এই অবস্থায় গাজার ভবিষ্যৎ আবারও সংশয়ে পড়ে গেছে। তবে এই অবস্থায়ও যুদ্ধবিরতির সুযোগ দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তার মতে, এখনো সব সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। আলোচনার মাধ্যমে একটি অবস্থানে পৌঁছার জন্য যথেষ্ট সুযোগ আছে।
এ বিষয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা গাজা উপত্যকায় চার মাস পুরোনো যুদ্ধে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্য সফররত অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, এখনো চুক্তির সুযোগ আছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘হামাস যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নেওয়ার স্পষ্ট সুযোগ কম।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমরা যে আলোচনার করছি তাতেও আমরা দেখছি যে একটি চুক্তি পৌঁছানোর সুযোগ আছে।’
অন্যদিকে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় হামাস। তিন ধাপের এই যুদ্ধবিরতির প্রতিটি ধাপের স্থায়ীত্ব হবে ৪৫ দিন করে। অর্থাৎ যুদ্ধবিরতির মোট সময়কাল হবে ১৩৫ দিন। হামাসের প্রস্তাব অনুসারে, গোষ্ঠীটি তাদের হাতে জিম্মি থাকা বাকি ইসরায়েলিদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েলকেও বিপুল পরিমাণ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে।
হামাস প্রস্তাবিত এই সময়ের মধ্যে গাজার পুনর্গঠন শুরু হবে এবং অঞ্চলটি থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার করা হবে। এমনকি উভয় পক্ষের কাছে থাকা মৃতদেহ ও অন্যান্য উপকরণও বিনিময় করা হবে এই সময়ে।
হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুসারে, ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের মুক্তির বিনিময়ে প্রথম ৪৫ দিনে সমস্ত ইসরায়েলি নারী জিম্মি, ১৯ বছরের কম বয়সী পুরুষ, বয়স্ক ও অসুস্থদের মুক্তি দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্বে অবশিষ্ট পুরুষ বন্দীদের ছেড়ে দেওয়া হবে এবং ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি পুরুষ বন্দীদের ছাড়তে হবে।
হামাসের প্রস্তাব অনুসারে, তৃতীয় অর্থাৎ শেষ ধাপে হামাস আশা করে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে এটি স্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি হামাসের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ধাপেই গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য প্রচুর ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, হামাস চায় অন্তত ১৫০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বন্দীর তালিকা দেবে হামাস। যারা ইসরায়েলি আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত।
উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চার মাস ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৭ হাজার ৫৮৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।