বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের হার এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। তবে হতাশার চিত্র মধ্যপ্রাচ্যে। ২০২২ সালে যে পরিমাণ জনশক্তি মধ্যপ্রাচ্যে গেছে, এর ৬৩ শতাংশই ফেরত এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের ক্ষেত্রে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি অবদান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের।
মোট অভিবাসীর প্রায় ৪৯ শতাংশই গেছে দেশটিতে। কিন্তু এত অভিবাসী গিয়েও প্রবাস আয় কম হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৬৩% জনশক্তি ফেরত
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ২০২২ সালের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস জরিপে অভিবাসীদের এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএসের প্রকাশিত এ জরিপের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
ওই বছর দেশ থেকে প্রতি হাজারে ৬.৬ জন মানুষ অভিবাসী হয়েছে।
সংস্থাটির প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২২ সালে মোট অভিবাসীর ৪৮.৯৯ শতাংশই গেছে সৌদি আরবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭.০৩ শতাংশ গেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ অভিবাসী গেছে পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায়।
এ দেশে গেছে মোট অভিবাসীর ৬.৪৮ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কুয়েতে গেছে ২.৪৮ শতাংশ। এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে গেছে ২.৫৫ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে গেছে ৪.৪৩ শতাংশ। তবে ফেরত আসা অভিবাসীদের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবের। ২০২২ সালে দেশটি থেকে বাংলাদেশে অভিগমন হয়েছে ৪৫.৭৯ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদেশি মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যে যত অভিবাসী গেছে, তার চেয়ে বেশি ফেরত এসেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে ১৮.১৩ শতাংশ অভিগমন বা ফেরত এসেছে বাংলাদেশে। এ দেশগুলোতে গিয়েছিলেন মাত্র ১৭.০৩ শতাংশ অভিবাসী।
বাংলাদেশের শ্রমবাজার হিসেবে পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। এ দেশেও যত অভিবাসী গেছে, ফেরত এসেছে তার চেয়ে বহুগুণ। আলোচ্য সময়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল ৬.৪৮ শতাংশ অভিবাসী, ফেরত এসেছিল ১১.৯২ শতাংশ।
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানিতে সংকটে পড়ার কারণ মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং নানাবিধ সামাজিক সমস্যা। পাশাপাশি তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়া, কনস্ট্রাকশন খাতে চাকরির সুযোগ কমে যাওয়া, ভিসা ট্রেডিং এবং স্থানীয়দের কাজে সম্পৃক্ততার উদ্যোগ নেওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য সংকুচিত হয়ে আসছে।
জটিলতা কাটেনি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়েও। সেখানে চলছে ধরপাকড়। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স কমে আসায় সরকার নতুন প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জনশক্তি রপ্তানিতে শিগগিরই সুসংবাদ মিলছে না বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানি খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১৫৮টিরও বেশি দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ১২ লাখ ২৫ হাজার ৯৫৯ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বিদেশে। ১৫৮টি দেশে বাংলাদেশের কর্মী গেলেও দক্ষ জনবলের অভাবে বাংলাদেশের বাজার সাত থেকে আটটি দেশেই সীমাবদ্ধ।