ধৈর্যের আরেক নাম সফলতা। ধৈর্যধারণকারীরা এমন সফল যে, স্বয়ং আল্লাহই তাদের সঙ্গী হয়ে যান। ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীর সঙ্গে থাকেন’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আল্লাহ যার সঙ্গে থাকবেন, তার সফলতা তো অবধারিতই।
তাই মহান আল্লাহ মুমিন বান্দাদের ধৈর্যধারণের তাগিদ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধরো ও ধৈর্যে অটল থাকো এবং পাহারায় নিয়োজিত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হও।’ (সুরা আলে ইমরান: ২০০)
ধৈর্য আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। প্রিয়নবী (স.) সবচেয়ে বেশি ধৈর্যশীল ছিলেন। ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ হয়েও তাঁকে অবিশ্বাসীদের বহু জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, তবুও তিনি সবসময় ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলাই তাঁকে এই অমূল্য নেয়ামত দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি ধৈর্যধারণ করুন, আপনার ধৈর্য হবে আল্লাহর সাহায্যেই।’ (সুরা আন-নাহাল: ১২৭)
ভয়, অভাব-অনটন, বিপদ-মসিবত ইত্যাদি ছাড়া ধৈর্য ধরার সুযোগ নেই, তাই আল্লাহ বিপদ-মসিবত, ভয় ইত্যাদি দিয়ে ধৈর্যের পরীক্ষা নেন। যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আর তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। (সুরা বাকারা: ১৫৫)
আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, নিশ্চয় ধৈর্যশীলদের অপরিমিত পুরস্কার দেয়া হবে। (সুরা যুমার: ১০)
ধৈর্যধারণ মহান আল্লাহর কাছে এতটাই প্রিয় যে তিনি এর বিনিময় বাড়িয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের দুবার প্রতিদান দেয়া হবে এ কারণে যে তারা ধৈর্যধারণ করে এবং ভালো দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করে। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। (সুরা আল কাসাস: ৫৪)
বিপদে ধৈর্যধারণ করার কারণে গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়, একইসঙ্গে আল্লাহর রহমতও অর্জিত হয়। মসিবতে যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে এবং মহান প্রভুর প্রশংসা করে, আল্লাহ তাআলা বিনিময়ে তার ওপর রহমত করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তারা সে সব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৭)
ধৈর্যকে সর্বোত্তম নেয়ামত আখ্যা দিয়ে নবীজি (স.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলতা দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোনো নেয়ামত কাউকে দেয়া হয়নি।’ (বুখারি: ১৪৬৯)
আবু উমামা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে বনি আদম, যদি তুমি ধৈর্যধারণ করো ও প্রথম দুঃখের সময় অধৈর্য না হয়ে তাতে সাওয়াবের আশা করো, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া কোনো প্রতিদানে সন্তুষ্ট হবো না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৯৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ধৈর্যের মতো মহা নেয়ামত ও মহৎ গুণ অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।