জাতীয় ক্রিকেট দলের বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানির দেওয়া সমঝোতার আশ্বাসে এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যায়নি আত্মহত্যার চেষ্টা করা তার স্ত্রী নাসরিন সুলতানার পরিবার। তবে সমঝোতার কথা বললেও হাসপাতালে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেননি সানি।
বৃহস্পতিবার রাতে সানির সঙ্গে ঝগড়ার জের ধরে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে নাসরিন সুলতানা। পরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি বিপদমুক্ত। তবে তাকে আরো ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় নাসরিনের পরিবারের সদস্যরা জানান, সানির সঙ্গে কথা হয়েছে, ওর আজ (শনিবার) আসার কথা, শুক্রবার রাতে সে বলেছে সমঝোতা করবে। তাই আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় যায় নি।
নাসরিনের মা রওশনা বেগম বলেন, শুক্রবার রাত আনুমানিক ১টার দিকে নাসরিনের জ্ঞান ফিরেছে। এখন তাকে আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। শারীরিকভাবে দুর্বল থাকায় এখন স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল রাতে আমরা জিডি করার জন্য গিয়েছিলাম, ডিউটি অফিসার সানির সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরে আমাদের ফোন করে জানায় শনিবার সকালে হাসাপাতালে সে আসবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে, যদি সে না আসে তবে যেন আমরা জিডি করি। ওর আশ্বাসে আমরা কোনো প্রকার আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়েই থানা থেকে ফিরে আসি।
ক্ষোভের সুরে নাসরিনের মা বলেন, এখন সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল এখনো সানি আসেনি। আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করব ও না আসলে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করব।
এমন কি ঘটেছিল বৃহস্পতিবার রাতে যাতে আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নাসরিন- জানতে চাইলে রওশনা বেগম বলেন, প্রায়ই ঝগড়া হতো সানির সঙ্গে। ওই দিন বেশি মাত্রায় ঝগড়া হয়। হঠাৎ হঠাৎ বাসায় আসত সানি, আমরা যদি তাকে জিজ্ঞেস করতাম বিয়ে করছো এখনো মেয়েকে তুলে নিচ্ছ না কেন, ও সব সময়ই সময় চাইত। নাসরিনকে নিয়ে নিজস্ব গাড়িতে করে ঘুরে আবার বাসায় নামিয়ে দিয়ে যেত।
“বৃহস্পতিবার রাতে আমার মেয়ে চল্লিশটি ঘুমের ওষুধ খায়, সকালে উঠে দেখি মেয়ের মরার মতো অবস্থা। দ্রুত আমরা সিএনজিতে করে মোহাম্মদপুরের আল মানার হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখান থেকে তারা রোগীকে বাংলাদেশ মেডিকেলে নিতে বলে, পরে তারাও রোগিকে রাখেনি, বাংলাদেশ মেডিকেলের পরামর্শে আমরা এখানে নিয়ে আসি।”
রওশনা বেগম বলেন, সানি যখন জেলে ছিল আমাদের বলেছিল আমাকে বের করেন আমি দ্রুত নাসরিনকে ঘরে তুলব। সে জেল থেকে বের হলো ঠিকই কিন্তু আমার মেয়েকে এখনো ঘরে তোলার কোনো প্রকার ব্যবস্থা করে নি।
সানির পরিবারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওর পরিবারের সবাই খারাপ, সানির মা বলে দিছে এই মেয়েকে নিয়ে আমার বাসায় উঠতে পারবে না, তোমাদের ভাড়া বাসায় আলাদা থাকতে হবে।
প্রতিবেদকের সামনেই সানিকে মুঠোফোন থেকে ফোন করে নাসরিনের বাবা মনির হোসেন। ফোনে সানি তার স্ত্রীর খোঁজ নেয় আর বরাবরের মতোই বলে আমি আসতেছি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মনির হোসেন বলেন, আমার মেয়ের জন্য সানির যদি ভালবাসা থাকত তাহলে ঠিকই সে আসত। ওর স্ত্রী হাসপাতালে ওর কোনো খবর নেই। এমনকি হাসাপাতালের খরচের ব্যপারেও আমাদের কিছু বলে নি। আমাদের মেয়েকে তো আর আমরা ফেলে দিতে পারি না।
নাসরিনের বাবা বলেন, আগামী ২৮ তারিখ সানির আগের মামলার একটা তারিখ রয়েছে, এর আগে আমার মেয়ের এই অবস্থা। সানির এখন কোথায় গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিসিবির কাছেও সানি নিজেকে নিদোর্ষ প্রমাণ করতে পারে নি, তাই বিসিবি তাকে জাতীয় দলের বাইরে রেখেছে। ও এখন শুধু জাতীয় লিগ খেলে।
যে এই ঘটনার মধ্যমণি, ক্রিকেটার আরাফাত সানি তাকে প্রতিবেদক ফোন দিয়ে নিজের পরিচয় দেবার পর সে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর বেশ কয়েকবার ফোনে রিং হলেও ফোন ধরেন নি সানি।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামালউদ্দিন মীর বলেন আমরা জেনেছি সানির স্ত্রী ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল, ভিকটিমের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করতে কেউ এসেছিল কিনা সেটা আমার জানা নেই। সৌজন্যেঃ চ্যানেল আই অনলাইন
বাংলাদেশ সময় : ১৫৫৪ ঘণ্টা, ২৬ আগস্ট, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ