ব্যবহার মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান। ইসলামে সুন্দর ব্যবহারকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহারের পাশাপাশি জীবনাচারের ক্ষেত্রে আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার পরিপালন জরুরি।
ইসলামে শিষ্টাচারকে ঈমানের অংশ বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ধীরে ধীরে শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ কমে যাচ্ছে। মানুষ ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ ভুলে যাওয়ার ফলে সমাজের অবস্থা দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। চলনে-বলনে অনেক নামাজী ও দ্বীনদার ব্যক্তিকেও ইসলামের পরিভাষার যথোপযুক্ত ব্যবহার সম্পর্কে উদাসীন দেখা যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ আছে, যেগুলো শব্দ প্রত্যেক মুসলমানই জানেন। কিন্তু এর ব্যবহার সম্পর্কে অসচেতন। তেমন কয়েকটি শব্দ ও তার প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বিসমিল্লাহ: প্রতিটি ভালো কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হয়। মন্দ কাজ ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই মন্দ কাজে বিসমিল্লাহ বলার প্রশ্নই আসে না।
আলহামদুলিল্লাহ: আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। যে কোনো সুখবর বা ভালো অবস্থা সম্পর্কিত সংবাদের বিপরীতে সাধারণত শব্দটি বলা হয়ে থাকে। যেমন ভাই আপনি কেমন আছেন? জবাবে বলা উচিত, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
ইনশাআল্লাহ: ইনশাআল্লাহ শব্দের অর্থ মহান আল্লাহ যদি চান তাহলে। ভবিষ্যতের হবে, করবো বা ঘটবে এমন কোনো বিষয়ে ইনশাআল্লাহ বলা সুন্নত। যেমন- ইনশাআল্লাহ, আমি আগামীকাল আপনার কাজটি করে দেবো। পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মুমিনদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন।
মাশাআল্লাহ: মাশাআল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ যেমন চেয়েছেন। যে কোনো সুন্দর এবং ভালো বিষয়ের ব্যাপারে এটি বলা হয়। যেমন- মাশাআল্লাহ তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো।
সুবহানাল্লাহ: সুবহানাল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ পবিত্র ও সুমহান। আশ্চর্যজনক ভালো কোনো কাজ হতে দেখলে সাধারণত এটি বলা হয়ে থাকে। যেমন সুবহানাল্লাহ! আগুনে পুরো ঘর পুরে গেলেও ঘরের মানুষ যথাসময়ে বের হতে পেরেছেন ও অক্ষত আছেন।
নাউযুবিল্লাহ: নাউযুবিল্লাহ শব্দের অর্থ আমরা মহান আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় চাই। যে কোনো মন্দ ও গুনাহের কাজ দেখলে তার থেকে নিজেকে আত্মরক্ষার্থে এটি বলা হয়।
আসতাগফিরুল্লাহ: আসতাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। অনাকাঙ্খিত কোনো অন্যায় বা গুনাহ হয়ে গেলে এটি বলা হয়।
ইন্নালিল্লাহ বা ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন: অর্থ নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার দিকেই ফিরে যাবো। যে কোনো দুঃসংবাদ বা বিপদের সময় এ দোয়াটি পড়তে হয়।
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ: অর্থ মহান আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা ছাড়া আর কোনো আশ্রয় ও সাহায্য নেই। শয়তানের কোনো ওয়াসওয়াসা বা দূরভিসন্ধিমূলক কোনো প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য এটি পড়া উচিত।
আসসালামু আলাইকুম: কারো সঙ্গে দেখা হলে অন্য কিছু না বলে আস সালামু আলাইকুম বলতে হয়। এটা সুন্নত আমল। এর সওয়াবও অনেক বেশি। আগে সালামদাতা অহংকার থেকে মুক্ত বলে হাদিসে ঘোষণা করা হয়েছে। সালামের অর্থ আপনার ওপর মহান আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক।
জাযাকাল্লাহ: কেউ আপনার কোনো উপকার করলে- তাকে জাযাকাল্লাহু খায়রান বলুন। অর্থ মহান আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।
আল্লাহ হাফেজ: কারও কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বলুন, আল্লাহ হাফেজ। অর্থ মহান আল্লাহ সর্বোত্তম হেফাজতকারী।
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের উচিৎ কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত বাক্যগুলো প্রয়োগ করা। মাত্র কয়েক দিন চেষ্টা করলেই দেখা যাবে, মনের অজান্তে শব্দগুলো মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে, এভাবেই প্রাত্যহিক অভ্যাসে পরিণত হবে- ইনশাআল্লাহ।