প্রতিনিয়ত আমরা নিজের অজান্তেই কত শত পাপ করি, অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ি; সেই পাপমোচনের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারও নেই। তাই মহান আল্লাহর কাছে পাপ থেকে মুক্তির প্রার্থনার বিকল্প নেই। সারাদিনই মহান আল্লাহ আমাদের কথা শোনেন, আমাদের সব রকমের চাওয়া-পাওয়া, সুখ-দুঃখের কথা শোনেন তিনি।
তবে বিশেষ কিছু সময় আছে যাদের দোয়া কবুলের সময় বলা হয়। এই সময়গুলোতে মহান আল্লাহ মানুষের মনের সব নেক ইচ্ছা পূরণ করার ওয়াদা করেছেন। চলুন জেনে নেই সেই সময় গুলো কখন।
দু’আ কবুলের প্রথম সময়টি হচ্ছে রাতের শেষ ভাগ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, “রাতে এমন একটা সময় আছে যখন এমন কোন মুসলিম বাকী থাকবে না, যার মনের নেক দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন না।” [সহীহ মুসলিম-১৬৫৫] এই হাদিস থেকে বুঝা যায় যে রাতের শেষ ভাগে এমন একটা সময় আছে যে সময়ে আল্লাহ বান্দার যে কন নেক ইচ্ছা পূরণ করবেন।
মহানবী (স.) আরও বলেন “যখন রাতের এক তৃতিয়াংশ অতিক্রম হয় তখন আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন আর বলেন, “আমিই তোমাদের পালনকর্তা, এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে দোয়া করবে আর আমি তা কবুল করবো? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দিবো? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিব?” [সহীহ মুসলিম-১৬৫৭]
দ্বিতীয় সময়টি হচ্ছে নামাজের মাঝে। নামাজের মাঝে এমন একটা সময় আছে যখন বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী থাকে। সে সময়ে যদি দু’আ করা হয় তবে তা আল্লাহ কবুল করেন। আর সেই সময়টি হচ্ছে সিজদা। কোন মানুষ সিজদায় থাকাকালীন আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে নিকটে থাকে। সিজদা হচ্ছে আল্লাহ’র কাছে সব চেয়ে প্রিয় ইবাদত। এ সময়ে বান্দা যদি আল্লাহর কাছে কিছু চায় তিনি তা কবুল করে নেন।
সৌদিতে খুলে দেওয়া হলো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ঝুলন্ত মসজিদসৌদিতে খুলে দেওয়া হলো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ঝুলন্ত মসজিদ
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “সেজদা করার সময় বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়, সুতরাং তোমরা সেখানে দোয়া কর।” [সহীহ মুসলিম ৪৮২] সিজদায় যাওয়র পর আরবি তে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়ার পর যে কেউ, যে কোন নামাজে, যে কোন ভাষায় আল্লাহর কাছে দু’আ করতে পারেন।
এ ছাড়াও ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর। অর্থাৎ ফরজ নামাজ শেষ হওয়ার ঠিক পর পর দু’আ করলে সে দু’আও কবুল হয়।
দু’আ কবুলের তৃতীয় সময়টি হচ্ছে ইফতারের ঠিক আগ মূহুর্তে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “নিশ্চই ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না” [সুনান ইবনে মাজাহ ১৭৫৩]।
শুধু মাত্র রমজান মাস না। কোন ব্যক্তি যদি সাধারণ দিনে নফল রোজাও রাখেন তাহলেও ইফতারের আগ মূহুর্তের সময়টা খুবই বর্কতপূর্ণ। সে সময়ে দু’আ করলে আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ।
চতুর্থ সময়টি হচ্ছে, আজান ও ইকামাতের মাঝের সময়টা। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন “আযান ও ইকামাতের মাঝে কোন দু‘আ প্রত্যাখ্যাত হয় না, তাই তোমরা এ সময়ে দু‘আয় লিপ্ত হও”। [আবু দাউদ-৪৩৭]। অর্থাৎ আজান দেয়ার পর যত দ্রæত সম্ভব মসজিদে গিয়ে নামাজের ইকামাত শুরুর আগ পর্যন্ত দু’আ করলে সে দু’আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেন প্রতি জুম্মাবার এমন একটা সময় আছে যে সময়ে আল্লাহ মানুষের মনের নেক ইচ্ছা কবুল করেন। এবং বেশিরিভাগ আলেমদের মতে সময়টি হচ্ছে আসরের সময় থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত। অর্থাৎ শুক্রবার আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুলের উত্তম সময়।
তবে শুধুমাত্র এই সময়গুলোই না। দিনের যে কোন সময়ে, যে কোন অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে দু’আ করা যায়। আল্লাহর সাথে তার বান্দার সম্পর্ক সারা জীবনের এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের।